Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাভার্ড ভ্যান হোটেলে

নাস্তা করতে এসে ঝরে গেলো পিতা-পুত্রসহ ৫ প্রাণ

এখন সময়: রবিবার, ৬ জুলাই , ২০২৫, ১২:১০:০৭ এম

বিল্লাল হোসেন  ও আব্দুল মতিন

সাত বছরের শিশু তৌহিদুর ওরফে তাওসী বাবা হাবিবুর রহমান পঁচার (৫৫) সাথে এসেছিলো সকালের নাস্তা করার জন্য। তারা ঘূর্ণাক্ষরেও কেউ জানতো না, নাস্তা না করে আর বাড়ি ফেরা হবেনা। নিয়ন্ত্রণ হারানো কাভার্ড ভ্যান নামক দানব মুহূর্তে হোটেলসহ কয়েকটি দোকানে ঢুকে কেড়ে নেবে তাদের প্রাণ প্রদীপ। হঠাৎ করে চলে যেতে হবে না ফেরার দেশে। 

শুক্রবার সকাল ৭ টার দিকে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মণিরামপুর উপজেলার বেগারীতলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পিতা-পুত্রসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। অন্যরা হলেন মণিরামপুর উপজেলার টুনিয়াঘরা গ্রামের মৃত রফিউ উদ্দিনের ছেলে মীর শামসুর রহমান (৬০), বাবু মিয়ার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম (৩৭) ও জয়পুর গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে জিয়ারুল ইসলাম (৩৫)। শামসুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলাম সম্পর্কে দাদা ও পৌত্র  (পোতা)। ৫ জনের মৃত্যুতে গোটা মণিরামপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মর্গে লাশের সারি দেখে নিহতের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এলাকা। তাদের আহাজারিতে উপস্থিত অনেকে মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় সাতক্ষীরাগামী একটি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন-২০-১৭৫১) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আবু তালেব মিয়ার খাবার হোটেলে ঢুকে যায়। আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় হোটেলে বসে সকালের নাস্তা করা মানুষজন বের হতে পারেননি। দানবের মতো হোটেল গুড়িয়ে কাভার্ড ভ্যানটি আঘাত করে আমিন উদ্দিনের চায়ের দোকানে। দুর্ঘটনায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় ঘটনাস্থলে ৫ জন মারা যান। 

বেগারীতলা বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে  হাবিবুর রহমান পঁচা তার ছেলে তাওসী ও জিয়াউল হোটেলে এবং পাশের দোকানে মীর শামসুর রহমান ও তার পৌত্র তৌহিদুল  চা-বিস্কুট খাচ্ছিলেন। 

মণিরামপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অফিসার প্রনব কুমার বিশ্বাস জানান, দুর্ঘটনাটি ছিলো ভয়াবহ। খবর পাওয়ার সাথেই ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। একে একে ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহগুলো যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কাভার্ডভ্যানের চালক ঘুমের ঘোরে থাকার কারণে দুর্ঘটনাটি হতে পারে। তিনি আরও জানান, কাভার্ডভ্যানের চাপায় ৫ জন নিহত ছাড়াও একটি হোটেল ও কয়েকটি চায়ের টোঙ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, দুপুর ১১ টার দিকে নিহতদের মৃতদেহ পৌঁছায় হাসপাতাল মর্গে। ৫ টি মৃতদেহ পাশাপাশি রাখা হয়। হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যে নিহতের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর্তনাদ ও আহাজারিতে হাসপাতাল এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃতদেহ দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে ছুটে আসেন।

হাসপাতালে কথা হয় নিহত পিতা-পুত্রের স্বজন মেহেদি হাসানের সাথে। তিনি জানান, হাবিবুর রহমান পঁচা ও তার ছেলের মৃত্যু তার পরিবার পাগল প্রায়। কেননা দুর্ঘটনার কিছু সময় আগেই তারা পিতা পুত্র হোটেলে গিয়েছিলো নাস্তা করতে। কে জানতো মুহূর্তেই তারা না ফেরার দেশে পাড়ি জমাবে। এমন মৃত্যু আর কারো দিও না খোদা........। 

আজিজুর রহমান নামে একজন জানান,  শামসুর রহমান ও  তার পোতা তৌহিদুল ইসলাম প্রায়দিন এক সাথে আসতেন। আর কখনো তারা বেগারীতলায় আসবেন না। দাদা ও পৌত্রের খুনসুঁটি আর চোখে পড়বে না। 

হাসপাতাল থেকে তাদের মৃতদেহ বাড়িতে নেয়ার পর রাখা হয় উঠানে। টুনিয়াঘরা গ্রামের ৪ জনের মৃত্যুতে চারিপাশে শোক আর শোক। স্বজনদের কান্নাকাটি ও বুক ফাটা আর্তনাদে প্রতিবেশীরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।  

স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে তহমিনা পাগল প্রায়। তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে  ফেলেছে স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কাঁদতে কাঁদতে মাঝে মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তিনি। জ্ঞান ফেরার সাথেই চিৎকার দিয়ে বলছেন “আমি বড় একা হয়ে গেলাম। কি অপরাধ ছিলো আমার। আমার সোনারা এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি। আল্লাহ তুমি আমার স্বামী সন্তানকে ক্ষমা করে দিও”।  

ভোজগাতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, কাভার্ড ভ্যানের চাপায় ৫ জন নিহতের ঘটনাটি অতি কষ্টদায়ক। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভোজগাতি ইউনিয়নের মানুষ শোকাহত। চারপাশে শোক আর শোক। নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাইনি। তবু তাদের বোঝানো হয়েছে। কান্নাকাটি না করে নিহতদের জন্য দোয়া করার জন্য। 

মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার পর মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে যশোর-সাতক্ষীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। 

দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ডভ্যানের চালক ও সহকারীকে আটকের চেষ্টা চলছে। কাভার্ডভ্যানটি পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে নিহতদের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান ওসি।  

মণিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) আলী হোসেন জানান, কাভার্ডভ্যান চাপায় পিতা পুত্রসহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাটি হৃদয় বিদায়ক। প্রতিটি মৃত্যু কষ্টের। তারপরেও ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ৭ বছরের শিশুর মৃত্যুতে তিনি বেশি ব্যথিত।  তিনি নিজেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)