মুক্তিযুদ্ধে চার খলিফার একজন নুরে আলম সিদ্দিকীর ইন্তেকাল

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ , ২০২৪, ০৫:৫৫:৪৮ পিএম

খাইরুল ইসলাম নিরব, ঝিনাইদহ : স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চার খলিফার একজন খ্যাত নূরে আলম সিদ্দিকী (৮২) মারা গেছেন। বুধবার ভোর রাতে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। এদিন বেলা ১২টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে তার মৃতদেহ ঝিনাইদহে আনা হয়।  জোহরের নামাজের পর ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা সম্পন্ন হয়।

 নূরে আলম সিদ্দিকী ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার নুরুন্নবী সিদ্দিকীর ছেলে এবং ঝিনাইদহ ২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর পিতা।  তাকে শেষবার একনজর দেখার জন্য রাজনৈতিক কর্মী, সহকর্মী, সহপাঠিসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ সেখানে ভীড় করেন। বাদ জোহর প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এর আগে তার রাজনৈতিক জীবনী নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপি, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদসহ অন্যান্যরা। জানাজা শেষে তাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দফা জানাজার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাভারে নিজের করা মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হবে বলে পরিবার সুত্রে জানা যায়। নুরে আলম সিদ্দিকী স্কুল জীবনে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার পরিচয় হয়। তখন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ওই বছরের ৭ জুন ৬ দফা আন্দোলনের একটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণে মনু মিয়া নামে একজন শ্রমিক নিহত হন। নুরে আলম সিদ্দিকী মনু মিয়ার লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল করেন। ওই বছরেই বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। নুরে আলম সিদ্দিকীকেও গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি নির্যাতনে তার একটি হাত ভেঙ্গে যায়। নুরে আলম সিদ্দিকী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৭০-১৯৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুকিযুদ্ধকালে নুরে আলম সিদ্দিকী স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ভারতে থেকে মুুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন।

নূরে আলম সিদ্দিকীকে মুক্তিযুদ্ধের ‘চার খলিফার একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মুজিববাহিনীর অন্যতম কর্ণধার ছিলেন তিনি। তিনি প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ছিলেন।

নূরে আলম সিদ্দিকী ঝিনাইদহ হাই স্কুল থেকে মেট্টিক পাশের পর কিছুদিন ঝিনাইদহ কেসি কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর ঢাকা জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পাশ করার পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নুরে আলম সিদ্দিকীর পিতা নুরুন্নবী সিদ্দিকী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছিলেন।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. রবিউল আলম ও যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. অশোক রায়।

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহেশপুর জানান, ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমির পিতা নুর-এ আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ শফিকুল আজম খান চঞ্চল।