বেনাপোল কাস্টমসে ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৩২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা

এখন সময়: সোমবার, ২৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:৩৩:০৭ পিএম

 

শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : বেনাপোল কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এবার রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা।

বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, ‘বৈশ্বিক মন্দা’, হরতাল ও অবরোধের প্রভাবে চলতি অর্থবছরের গত ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ সময়ে ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন,  গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এবার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি কমেছে। ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় আমদানিকারকেরা লোকশানের আশঙ্কায় অনেকে আমদানি বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরও কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির কবলে পড়তে পারে এ বন্দর।

তাদের দাবি, দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় শুল্ক ফাঁকি অব্যাহত রাখায় গত ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হচ্ছে।

ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতিমাসে নিদিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমসে এ লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

এ সময় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সে সময় আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৬৩২ কোটি ১ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ৩০৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ সময় আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ৬ মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এখানে আমদানি কমেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিন টন পণ্য এবং রাজস্ব ঘাটতি ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল, অবরোধ আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। খাদ্য দ্রব্যসহ শিল্প, কলকারখানার কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দ্রব্য আমদানি করতে ডলারের চাহিদা মেটাতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছেন। এতে আমদানি কমায় দেখা গেছে রাজস্ব ঘাটতি। তবে আমরা আশাবাদি এ অর্থবছর শেষে সকল সংকট মোকাবেলা করে বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে ৩০ শতাংশ। দ্রুত এ সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে পারে এ বন্দর।

সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, শাড়ি, থ্রি-পিছ, কসমেটিক্স, ব্লাঙ্ককেট, মেশিনারি পার্টস, সার্জিক্যাল, চকলেটসহ আমদানিযোগ্য অনেক পণ্য দীর্ঘদিন যাবত বেনাপোল আর্ন্তজাতিক চেকপোস্ট কাস্টম হয়ে অসাধু সিন্ডিকেট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে।

এতে চেকপোস্ট কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তার অবৈধ পণ্য পাঁচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) নাইম, ইমরান, লিঙ্কন, দিদার বক্স, আনিছুর রহমান আনিছ, শরিফ,  ছাবিরা, সিপাই মতিন, নাজমুল, শুল্ক গোয়েন্দা আফজাল হোসেন, রাসেদ, ট্যান্ডেল সাদ্দামসহ কতিপয় কর্মকর্তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। অন্যদিকে আমদানিকারকেরা শুল্ক দিয়ে বৈধপথে আমদানি বাণিজ্যে লোকশান গুণতে গুণতে আমদানি বাণিজ্য বন্ধ করছে।

ফলে সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়। যে কারণে গত ১২ থেকে ১৩ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর বেঁধে দেয়া রাজস্ব আহরণে ব্যর্থ হচ্ছে বেনাপোল কাস্টম হাউস।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম অযৌক্তিক বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারছিনা। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও বর্তামানে ১০০ ডলারের বিপরীতে ব্যাংক ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত কাটছে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন ব্যহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।