❒কাচ্চি ভাইয়ের ক্যাশিয়ার রকির যশোরে দাফন

‘মৃত্যুর আগে মোবাইল ফোনে মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি’

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৬:২৩:১৫ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : মোবাইল ফোনে মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন কামরুল হাবিব রকি (২১)। কিন্তু বাঁচতে পারলেন না। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার বেইলী রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডে? তিনি মারা যান। দরিদ্র পরিবারের শত স্বপ্ন পূরণে দুই মাস আগে রেস্টুরেন্টটিতে চাকরি নেন রকি। এরপর পোড়া লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। রকির বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কামারপাড়াতে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এদিন জুম্মার নামাজের পর স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এদিন দুপুরে রকির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয় স্বজনেরা ভিড় করছেন। উঠোনো রাখা খাটিয়ায় কাফনের কাপড় পরানো রকির মরদেহ। স্বজনেরা চেয়ারে বসে আছে। একটু দূরে দাদী রেহেনা বেগম আহাজারি করছেন। তার পাশে রকির মা রিপা খাতুন বিলাপ করছেন। নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা তাকে শান্তনা দিচ্ছেন।
রিপা খাতুন বিলাপের সুরে বলেন, ‘আমার ছেলেটারে মাদ্রাসাতে পড়িয়েছি। নামাজ কালামের ওপরে থাকতো। কতো আদরের ছেলে ছিল। ও সোনা পাখি.....। তুমি (রকি) না বলেছিলে; আমার ছাড়া থাকতে পারবে না। কেনো তুমি আমারে ছেড়ে চলে গেলে।
আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমারে কল দিয়েছে। দিয়ে বলছে, মা আমার কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে। আমারে বাঁচাও। আমিও তারে (রকি) শান্তনা দিচ্ছি তোমার কিছু হবে না সোনা। দোয়া পড়ো সব ঠিক হয়ে যাবে। তার পরেও সে বলতো লাগলো, আম্মু আমি আর বাঁচবো না। তার পরে ফোন কেটে গেল। আর কিছু শুনতে পারলাম না। আর কোনো কথাও হলো না। আমার সোনা আমার না রেখে কিছু খেতো না। এখন কি হবে সোনা। ও আল্লাহ তুমি আমার সোনারে ফিরিয়ে দাও...। আমার সোনার বদলে আমারে নিয়ে নাও....।
নিহত রকির ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, আমান ভাই আলিম পাস করে গত ডিসেম্বর মাসে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি নেন। বৃহস্পতিবার সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুন লাগে। তিনি ভবনে আটকা পড়েন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে মারা যান। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়েই তার মৃত্য হয়েছে। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ বাড়িতে এসেছে।
রকির কামরান হোসেন সাজিম বলেন, আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রকি সবার বড়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিল। বাবা ইজিবাইক চালান। তাদের দুজনের আয়ে আমাদের সংসার চলতো। ভাইকে এভাবে হারাতে হবে কখনো কল্পনাই করিনি।
নিহত রকির মামা জিহাদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রকির ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়েছি, সে রিসিভ করেনি। পরে আমাকে কল ব্যাক করে বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমাকে বলে মামা আমাদের ব্রাঞ্চে ( কাচ্চি ভাই বেইলি রোড শাখা) আগুন লাগছে। আমি আটকা পড়েছি। আমাকে বাঁচাও। কিছুক্ষণ পর কল কেটে যায়। আমি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। তারা জানাই উদ্ধার কাজ চলছে, ধৈর্য ধরুন। এরপর আমি ঢাকায় রওনা হই। সেখানে হাসপাতালে পায় রকিকে। ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে।