নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচটি শ্রেণিতে ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী থাকায় একীভূত হচ্ছে যশোরের ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এসব বিদ্যালয়গুলো একীভূত করতে তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব বিদ্যালয়ের পাঁচটি শ্রেণিতে ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী থাকবে সেগুলো একীভূত হবে। একত্রিত করার জন্য প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের নাম, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, জমির পরিমাণ, যে বিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্রিত করা হবে তার নাম ও বর্তমান বিদ্যালয় থেকে একত্রিত করার জন্য প্রস্তাবিত স্কুলের দূরত্ব, প্রস্তাবিত স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করে অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম ১৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি এই তালিকা পাঠানো হয়।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ জন। গ্রামটি আয়তনে ছোট ও জনসংখ্যায় কম। জন্মহার কমের সঙ্গে দুই কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক সরকারি বিদ্যালয় থাকাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। অথচ নামমাত্র শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান চলছে। এতোদিন ধরে গোঁজামিল তথ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি চালানো হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়টিসহ এরকম মোট ১৬টি বিদ্যালয় একীভূত হতে চলেছে।
বিদ্যালয়গুলো হলো, ১৮ জন শিক্ষার্থীর অভয়নগর উপজেলার হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৮ জন শিক্ষার্থীর কেশবপুর উপজেলার সানতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪ জন শিক্ষার্থীর পল্লীমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮ জন শিক্ষাথীর্র ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৪ জন শিক্ষার্থীর তেঘরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মনিরামপুর উপজেলার পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৮ জন শিক্ষার্থীর ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩০ জন শিক্ষার্থীর দক্ষিণ পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩১ জন শিক্ষার্থীর কুমারসীমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪ জন শিক্ষাথীর গোপমহল মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৫ জন শিক্ষার্থীর কামিনীডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৯ জন শিক্ষার্থীর হাটগাছা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৩ জন শিক্ষার্থীর উত্তর দহাকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৩ শিক্ষার্থীর বয়ারখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৭ শিক্ষার্থীর জোকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪২ শিক্ষার্থীর সদর উপজেলার দক্ষিণভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুহাঃ আবুল কাশেম বলেন, আমার উপজেলাতে হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮ জন শিক্ষার্থী। ছয় জন শিক্ষক রয়েছেন। মূলত ওই এলাকাটিতে জনসংখ্যা কম, জন্মহারও কম। বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত বিবেচনা করে দেখেছি বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো অসম্ভব। তা ছাড়া পাশেই ফুলেরগাতি হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা তালিকা প্রস্তুত করেছি। কিন্ত ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বড় একটি অংশ অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না।’
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, করোনা ভাইরাসের পর এই জেলায় অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমেছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরপরেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা না বাড়াতে অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে পাঠিয়েছি। এতে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও যাতায়াতসহ নানা সমস্যা পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো যাতায়াত সমস্যা বা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না। বরং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ নানা সুবিধার আওতায় আনবে সরকার।
এ বিষয়ে ডিপিই পরিচালক মনিষ চাকমা বলেন, একীভূত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় পর্যায়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। ৫টি ক্লাসে ৫০ জন শিক্ষার্থী না থাকার পরও এসব চালানো রাষ্ট্রীয় অপচয়। তবে কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়ন হবে সেটি বলতে পারেননি তিনি।