করোনা টিকা নিয়ে অসুস্থ সাংবাদিক,শরীরে প্রতিনিয়ত নতুন উপসর্গ

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৬:৩৫:৫৯ এম

 

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : করোনাভাইরাসের অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা নেয়ার পর থেকে ভয়াবহ পাশর্^প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একাত্তর টিভির বাগেরহাটের নিজস্ব প্রতিবেদক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী এখনও অসুস্থ। বিদেশে করোনার টিকা নিয়ে গবেষণায় ভয়াবহ যে সব তথ্য উঠে এসেছে তার প্রায় সমস্ত প্রভাব পড়েছে তার শরীরে। দুই সপ্তাহ আগেও তার মস্তিস্কে নতুন করে আরো ভয়ংকর উপসর্গ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন উপসর্গের সাথে লড়াই করছেন একাত্তর টিভির সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনার অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে তার শরীরে পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করে। টিকা নিয়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিষ্ণু প্রসাদ অসুস্থ। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও তিনি এখনও সুস্থ হতে পারেনি। টিকা নেয়ার পর অসুস্থ হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা তার উপসর্গ নিয়ে গবেষণার কথা বলছেন। শীঘ্রই তিনি চিকিৎসার জন্য আবারো দেশের বাইরে  যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের টিকার বিভিন্ন পাশর্^প্রতিক্রিয়ার কারণে ৩৩ বছর ধরে সংবাদের পিছনে ছুটে চলা বিষ্ণু প্রসাদের সাংবাদিকতার গতি থামিয়ে দিতে চলেছে। সংবাদের খোঁজে সবসময় অগ্র ভাগে ছুটে চলা এই সাংবাদিক প্রতিনিয়ত টিকার পাশর্^পতিক্রিয়ার সাথে লড়াই করছেন।

বিষ্ণু প্রসাদ চক্রর্ত্তী, একাত্তর টেলিভিনের পাশাপাশি ইউনাইটেড নিজ অফ বাংলাদেশ (ইউএনবি) এবং কালের কন্ঠ’র সাথে যুক্ত রয়েছেন। ইউএনবি থেকে তিনি পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন।

জানা গেছে, সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রথম দিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাসের অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ড টিকা গ্রহণ করেন। এর ১ ঘণ্টার মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর একের পর এক উপসর্গ দেখা দেয় তার শরীরে। জ্বর, বুকেব্যথা,শ্বাসকষ্ট, মাঝে মধ্যে নিশ^াস বন্ধ হয়ে আসে, মাথায় যন্ত্রণা, গলাব্যাথা, মুখ ও গলাশুকিয়ে আসা,কথা বলতে কষ্ট হওয়া, মেমোরিলস, শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পাড়াসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। গত দুই সপ্তাহ আগে তার মস্তিস্কে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে মস্তিস্কে প্রচণ্ড ভাবে ঝাকুনি দেয়।

টিকা নেয়ার পর অসুস্থ বিষ্ণু প্রসাদকে প্রথমে বাগেরহাটের চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। এর পর খুলনা ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিউতে তাকে দুই দফা ভর্তি করা হয়। তাকে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। একটানা ২১ দিন বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিলেন ওই সাংবাদিক। সেখানে চিকিৎসকরা তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। এর পর সে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিঅ্যাক সাইন্স হাসপাতালে একবার, হায়দ্রাবাদে এআইজি হাসপাতালে দুইবার এবং ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে দুইবার চিকিৎসা নেয়।

অসুস্থ সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী জানান, টিকা গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম।  দেশব্যাপি উদ্বোধনের প্রথম দিন প্রথম যে ৫ জন টিকা গ্রহণ করে ছিল তার মধ্যে আমি একজন। টিকা নেয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে আমার শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। দিন পার হওয়ার সাথে সাথে শরীরে উপসর্গের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এখনও সব উপসর্গ শরীরের রয়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে মস্তিস্কে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে মস্তিস্কে প্রচণ্ড ভাবে ঝাকুনি দেয় যা সহ্য করা অনেক কঠিন। অসংখ্য উপসর্গের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি। এই ভাবে বেঁচে থাকা কঠিন।

বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী আরো জানান, টিকা নেয়ার আগে এবং পরে বেশ কয়েকবার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কখনো আমার করোনা ধরা পরেনি। শরীরের যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে সবই টিকা নেয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে। আমি এখনও বেঁচে আছি বলে নানা উপসর্গের কথা বলতে পারছি। খুলনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছিল বলে শুনেছি। এর পর স্বাস্থ্য বিভাগের আর কোন অগ্রগতি আছে কি না আমার জানা নেই। দেশে-বিদেশে নিজের চিকিৎসা করাতে এরমধ্যে বেশ কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করেছি। শীঘ্রই চিকিৎসার জন্য আবারো দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছি।

বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তীকে প্রথম চিকিৎসা দেয়া বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বকসী জানান, প্রথিতযশা সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা নেয়ার পর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে আমি নিজে তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। তার চিকিৎসায় বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকায় বিএসএমএমইউতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এর পর তিনি নিজ উদ্যোগে কয়েকবার ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। দেশে-বিদেশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও তিনি সুস্থ হতে পারেনি। অদ্যাবধি সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ এবং বেশকিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগছে।

ডা. প্রদীপ কুমার বকসী আরো জানান, টিকা নেওয়ার পর থেকে বিষ্ণু প্রসাদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, ভারসাম্যহীনতা, বুকে অনেক রকম ব্যথা, মাঝে মাঝে জ¦র, মাথাব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, অরুচি, শরীরের মধ্যে এক ধরনের কম্পন, সমস্ত শরীরের ব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন। যে হেতু তিনি করোনা টিকা নেয়ার পরবর্তী সময় থেকে নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ সে ক্ষেত্রে টিকার পাশর্^প্রতিক্রিয়ার বিষয় আছে কি না জানতে গবেষণা করা জরুরি।

বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী করোনার টিকা গ্রহণ করার আগে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। করোনার টিকা নেয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে নানা উপসর্গ নিয়ে তিনি অসুস্থ। যে কোন টিকার পাশর্^প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। টিকা গ্রহণের পর তার শরীরের যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণা করা প্রয়োজন এবং তার অসুস্থতার বিষয় নিয়ে বিশ^স্বাস্থ সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা জরুরি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবারো বিএসএমএমইউতে রেফার্ড করা হয়েছে। সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন ফকিরহাট সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।