খুলনা প্রতিনিধি: ট্রেনের অপক্ষায় যাত্রীদের কেউ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে; আবার কেউ ওভার ব্রিজের ওপরে অবস্থান করছিলেন। যাত্রী ও উৎসুক জনতার আগ্রহের যেন কোনো কমতি নেই। ওভার ব্রিজ থেকে ট্রেন দেখা যেতেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন সকলেই। শনিবার সকাল ১০টায় ৬৮৭ জন যাত্রী নিয়ে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া ‘মোংলা কমিউটার’ ট্রেন দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে খুলনার মোহাম্মদ নগর স্টেশনে পৌঁছায়। ৫ মিনিট বিরতির পর দুপুর ১টার দিকে যাত্রী নিয়ে মোংলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি মোংলা পৌঁছায়।
প্রতিদিন সকাল সোয়া ৯টায় বেনাপোল থেকে ট্রেনটি মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে; তবে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।
ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা প্রণব বলেন, নতুন রেলপথ আমাদের জন্য একটি বিশেষ ব্যাপার। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিক্ষায় ছিলাম যে কবে খুলনা-মোংলা রেলপথে ট্রেন চলবে। আমাদের একটা অপেক্ষার পালা শেষ হলো। প্রথম দিনের যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে আমরা গর্বিত।
সাকিব নামে আরেক যাত্রী বলেন, ঈদের আগে আমরা একটি উপহার পেয়ে গেলাম। আমার কাছে মনে হয় সূচিটা একটু পরিবর্তন করা দরকার। অনেক চাকরীজীবী আছে যারা এখান থেকে মোংলা গিয়ে অফিস করবেন। তাদের কথা চিন্তা করে একটু সকালে ট্রেনটা দেয়া উচিত। আর বিকেলে আরেকটা।
বেনাপোল থেকে খুলনার মোহাম্মদ নগর স্টেশনে নামা যাত্রী পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা ননী সাহা বলেন, পরিবারসহ ভারতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আজ ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর হয়ে খুলনায় এসেছি। এখন পিরোজপুর যাব। আজকে প্রথম যাত্রী হয়ে আসতে পেরেছি। এ জন্য আমি খুবই আনন্দিত।
সাবিনা আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, নৌবাহিনীতে আমি চাকরি করি। মোংলাতে আমার অফিস। আজ ছুটির দিন তাই নতুন রেলপথে ট্রেনে ঘুরতে যাচ্ছি। আমরা অনেক আনন্দিত, খুশি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এই ট্রেন যাত্রার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
ট্রেনের সূচি অফিস টাইমের আগে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সকাল ৮টায় অফিস। আমরা যেন আড়ংঘাটা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টার মধ্যে মোংলায় পৌঁছাতে পারি- এমন সময়ে যদি ট্রেন যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।
খুলনার মোহাম্মদ নগর রেলস্টেশনের টিকিট বুকিংয়ের দায়িত্বে থাকা মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। আজকে নতুন রেলপথে ট্রেন চালু হচ্ছে। স্টেশনে জনতা ও যাত্রীদের অনেক ভিড়। যাত্রীদের জন্য সুবিধা হলো মোংলা থেকে বেনাপোল যাওয়ার এবং বেনাপোল থেকে মোংলা যাওয়ার জন্য।
এর আগে শনিবার সকালে ট্রেনটি খুলনা থেকে ছেড়ে ৯টা ২৫ মিনিটে বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর সেখান থেকে সকাল ১০টায় যাত্রী ভর্তি করে মোংলার উদ্দেশ্যে রওনা করে ট্রেনটি। খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত ট্রেনটি বেতনা এক্সপ্রেস নামে চলার পর সেখান থেকে মোংলা কমিউটার নামে চলবে। ১৩৮ কিলোমিটার রুটে মোট ৮টি স্টেশনে দাঁড়াবে এই ট্রেন। খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এরপর ফুলতলা থেকে মোংলা নতুন রেলপথে এ ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার।
বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বেনাপোল থেকে যাত্রী ভর্তি বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি মোংলার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ছাড়ার পর নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রা বিরতির পর মোংলায় যাবে।
তিনি বলেন, সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি মোংলায় পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। এরপর মোংলা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন এ রুটে একই সময়ে ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেনটিতে মোট আসন সংখ্যা ৭১৬টি। বেনাপোল থেকে প্রায় ৬০০ জন যাত্রী নিয়ে মোংলায় যাবে ট্রেনটি।