Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒স্থাপনার দগদগে ক্ষত দৃশ্যমান

স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে যশোর

এখন সময়: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর , ২০২৪, ০৬:৫৬:৫৮ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রীতিমতো যশোরে তাণ্ডব চালায় বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। শহর জুড়েই সরকারি বেসরকারি নানা স্থাপনা থাকলেও তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিলো আওয়ামী লীগের স্মৃতিস্থাপনা, দলের শীর্ষনেতাকর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ছোট বড় স্থাপনা ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে লুটপাটও করা হয়েছে। এসব ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হলেও প্রাণ হারিয়েছে ২৪টি তাজা প্রাণ। সহিংসতার পর শহরজুড়েই থমথমে থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শহর জুড়ে তাণ্ডব চালানো স্থাপনাগুলোর দগদগে ক্ষত এখন দৃশ্যমান।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর মালিকেরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আত্মগোপনে থাকাতে ক্ষয় ক্ষতির অর্থের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে সচেতন মহল বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে রাজনীতিক দুর্বৃত্তরা এসব ঘটিয়েছেন। মূলত তাদের দীর্ঘদিনের রাজনীতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এটি। আর প্রশাসন বলছেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।    

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গত সোমবার বিকেল চারটার দিকে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিজয়মিছিলে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা। শহরের চিত্রামোড়ে অবস্থিত ১৪ তলা হোটেলটিই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। হোটেলটিতে থাকা এক বিদেশি অতিথি, কর্মচারী, আন্দোলনকারীসহ মোট ২৪ জন নিহত হয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৩ জন। খুলনা ও যশোরের সাতটি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা টানা ৭ ঘণ্টা পর হোটেলটিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও; ততক্ষণে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেলটি পুড়া অবকাঠামো ছাড়া কিছুই নেই। শহরের সবচেয়ে উচুঁ ভবনটি গ্লাস আর অ্যালুমিনিয়ামের পাতের বহিরাবরক চকচকের কারণে যেকোন প্রান্ত থেকেই এতোদিন ছিলো সবার নজরকাড়া। আর বর্তমানে ভবনটি দগদগে ক্ষত। পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে গত দুদিন ধরে শহরের বস্তির বাসিন্দারা পুড়ে যাওয়া বালিশ, বিছানা থেকে শুরু করে বিলাসবহুল জিনিসপত্র খুলে নিয়ে গেছেন। শাহীনের পাঁচ তারকা হোটেল ছাড়াও, তার শহরের অন্যপ্রান্তে কাজীপাড়া কাঠালতলাস্থ তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি, ব্যক্তিগত রাজনীতিক কার্যালয় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।  এসব ঘটনায় শাহীন চাকলাদার আত্মগোপনে থাকাতে তার বক্তব্য জানা যায়নি। 

শাহীনের হোটেলে তান্ডব চালানোর পর মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে হাতে লাঠি নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত শহরের রেলসড়কে অবস্থিত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের ছেলে পার্থপ্রতিম নাথের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নাথ কম্পিউটারে হামলা করে লুটপাট করেছে। এ সময় দোকান ও তিনটি গুদামে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এসি, রাউটার ও আমদানি করা যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পার্থপ্রতিম নাথ বলেন, ‘২৪ বছর ধরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি সাজিয়েছি। মাথায় জাতীয় পতাকা হাতে লাঠি নিয়ে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে চার কোটি টাকার বেশি মূল্যের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে খবর দিলে শেষ দিকে গাড়ি আসে। কিন্তু লুটপাট ঠেকানো যায়নি। বাবা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে ও উপজেলা নির্বাচনে লড়ে অনেক টাকা খরচ করেছেন। আমরা ব্যাংকের কাছে কোটি কোটি টাকা ঋণী। আমরা এখন বেকার। বাড়িতে বসে আছি। নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় বসে গেলাম।’ একই সঙ্গে মোহিত নাথের ব্যক্তিগত অফিস ও তার প্রকাশনায় প্রকাশিত দৈনিক প্রজন্মের ভাবনা পত্রিকা অফিস ভাঙচুর করে ১০টি কম্পিউটার লুট করে নিয়ে গেছে বলেও পার্থপ্রতিম জানান। একই জায়গায় অবস্থিত কেরু অ্যান্ড কোং মদের পরিবেশক সুকুমার কুমারের এফএল শপ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। রেলসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, নাথ কম্পিউটার নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির দরজার শার্টার ভাঙা। দোতলার পত্রিকা অফিস ও মোহিত নাথের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনের থাই কাচ ভাঙা। এ সড়কের অধিকাংশ দোকানপাট এতোদিন বন্ধ থাকলেও কিছু দোকান খুলেছে।

শহরের বকুলতলাস্থ মোড়ে দেশের সর্ববৃহৎ শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। শুধু ভাংচুর নয় বৃহৎ ম্যুরালে দৃষ্টিনন্দন পাথর দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির প্রকৃতি তৈরি করাও সেটিও তুলে ভাংচুর করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে শেখ হাসিনার নাম ফলকও। লুট করে নিয়ে গেছে ম্যুরালে চারিপাশের নিরাপত্তা বেষ্টনীও গ্রীলও। এছাড়া শহরের চারখাম্বা মোড়ে শেখ রাসেল ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে বিজয়মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে দেখো গেছে, ভেঙ্গে চুরমার করা হয়েছে শেখ রাসেলের আবক্ষ পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঁচ। লুট হয়ে গেছে নিরাপত্তা বেষ্টনীও। এদিকে, শহরের বকুলতলাস্থ হয়রত গরীব শাহ্ রহঃ মাজার শরীফ। সেখানেও দুর্বৃত্তরা সোমবার রাতে হামলা লুটপাট করেছেন। মাজারের দায়িত্ব থাকা কর্তরা জানিয়েছে, ‘হঠাৎ রাতে একদল দুবৃর্ত্তরা এসে ভাঙচুর করা শুরু করেন। মাজারের লোহার বেষ্টনী ও গ্রীল খুলে নিয়ে গেছে। মাজারের ভিতরে সিন্দুক, দামি দামি পর্দ্দা, টিউবয়েল লুট করে নিয়ে গেছেন। মাজার লুট ভাংচুরের ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা করছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা। বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন তার ফেজবুকে লুট ও ভাংচুর চালানো মাজারের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন ‘ মাজার গুঁড়ো করে ফেলতো কারা মনে আছে? আইসিসরা। বাংলাদেশে যারা মাজার ভাঙছে, তারা বাংলাদেশি আইসিস।’

স্থানীয়রা জানান, শুধু যশোর শহর নয়, উপজেলা জুড়েই নৈরাজ্য, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গত তিনদিন ধরে এসব ঘটনা ঘটলেও কাউকে ঠেকাতে দেখা যায়নি। পুলিশ কর্মবিরতি থাকাতে তারাও মাঠে নেই। জেলায় থানা ও ফাঁড়িগুলো তালাবদ্ধ দেখা গেছে।

আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আর কোনো হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য পুলিশ সজাগ আছে। সমাজের অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। হামলার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অফিস ও বাসা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের সঙ্গে বিএনপির কোন নেতাকর্মী জড়িত না। টানা ১৫ বছরে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে শাসন নির্যাতন করেছে, সেটা জনগণের বহিঃপ্রকাশ। জনগণের রোষানলের ভয়ে আতংকে তারা আত্মগোপনে। যশোরে ভাঙচুর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন অমিত। হতাহতদের উদ্ধারে আমরা তৎপর ছিলাম। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। সংখ্যালঘুদের বাড়ি উপসনালয় রাত জেগে পাহারা দিয়েছে আমাদের কর্মীরা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি বলে জানান তিনি।’ 

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)