অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি: চারিদিকে থৈ থৈ পানি। যেন হাঁটা চলার উপায় নেই। এঅবস্থায় মানুষের বাইরে বের হওয়া দুষ্কর। আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে সবার। তবে সামনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সামনে চেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা কিভাবে হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তারপরও আশায় বুক বেঁধে থৈ থৈ পানির মধ্যেই মণ্ডপ প্রতিষ্ঠা করে উৎসব পালনের চেষ্টায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সাম্প্রতি দুই দফা টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ২৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ভবদহ অঞ্চলে মানুষের এই উৎসবের আনন্দ অনেকটাই ম্লান। আগেই তীব্র বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, ঘেরভেড়ী, ফসলি ক্ষেত, স্কুল কলেজ মাদ্রসা ও মসজিদ মন্দির। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের দৈনন্দিন পুজা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে শতশত পরিবার। বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে আয় রোজগারের সকল পথ। মানুষের ঘরে ঘরে এখন কেবল হাহাকার আর চাঁপাকান্না।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দরজায় কড়া নাড়ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীও উৎসব দূর্গাপুজা। আসছে আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে এবং ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হবে। তবে এ উপলক্ষে উৎসবের কোনো আমেজ নেই ভবদহ অঞ্চলের প্রেমবাগ, সুন্দলী, পায়রা ও চলিশিয়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগী সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে। চারিদিকে কেবল থৈ থৈ পানি ও সীমাহীন দুর্ভোগে উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। তিনবেলা তিনমুঠো ভাত জোগাড় যেখানে চরম আরধ্য উৎসব সেখানে নিতান্তই বিলাসিতা বলে জানিয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষ।
উপজেলা পরিষদের তথ্য মতে, অভয়নগরে অর্ধশতাধিক মন্দির পানিতে তলিয়ে গেছে। পূজা অর্চনার ন্যূনতম অবস্থা নেই ৩০ থেকে ৩৫ টি মন্দিরে। তাছাড়া পানির কারণে সুন্দলী ইউনিয়নের ৪টি ও আন্ধা গ্রামের একটি মন্দিরে কোনো প্রকার পূজা হবেনা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। উপজেলায় এ বছর ১১৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা পূজা উদযাপন হবে।
সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিহাটি গ্রামের বাসিন্দা টুকু মজুমদার বলেন, গত একমাস ধরে সংসারে আয় রোজগার বন্ধ, মাছ ধরে তা বিক্রি করে কোনমতে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছি। পুজো উৎসব আমাদের মত গরিব মানুষের জন্য না।
চলিশিয়া ইউনিয়নের বলারাবাদ গ্রামের বাসিন্দা উশা রাণী বলেন, আমাদের কোন পুজো নেই, পুজোর সময় ছেলে মেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারছিনা। পানিও সরছে না। আমাদের কষ্ট দেখার আসলে কেউ নেই।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবছর সরকারি যে বাজেট থাকে দুর্গাপূজার জন্য তা ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া যারা একান্ত অসহায় তারা যদি কোনোপ্রকার সাহায্যের জন্য আবেদন করে আমরা তাদেরকে সহায়তা বরবো।