নিজস্ব প্রতিবেদক, মহেশপুর : মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের দোবিলা বিল বাংলা ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র মাস পর্যন্ত ইজারা থাকলেও স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের দুই নেতা বিল দখল করে নেওয়ায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে ইজারা গ্রহণকারীরা দাবি করেছেন। এ দখল বাণিজ্যের কারণে ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতারা মনে করছেন। তাদের এই লুটপাট ও দখল বাণিজ্যের কারণে আগামীতে বিএনপির ভোট ব্যাংক শূন্যের কোঠায় চলে যেতে পারে বলেও তাদের ধারণা।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে জালাল জানান, মহেশপুরের আজমপুর ইউনিয়নের দোবিলায় ২৩১ একর জমি আছে। সরকার প্রতি বছর ৪০ লাখের অধিক টাকা লিজ ইজারা গ্রহণ করে। মহেশপুর হালদার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে প্রতিবছর ১ বৈশাখের আগে নবায়ন চুক্তিতে সরকারের কোষাগারে ৪০ লাখ টাকা ইজারা পরিশোধ করে মাছ চাষ করে থাকি। বিলের ৩ পাট আছে। এক অংশ আদমপুরের নিচে অন্যটা সৈয়দপুর ও নওদাগ্রামের অংশ নিয়ে। আমরা কয়েকজন সৈয়দপুর ও নওদাগ্রামের অংশে ৫ পুকুরসহ ৩শ বিঘার মত বিলে মাছ চাষ করে আসছিলাম। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলে পরদিন ইউনিয়ন বিএনপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি তবিবর রহমান ও ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম বিলটি লুট করে দেন। পরে আমরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের সাথে বসে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সময় দেয়ার অনুরোধ করা হয়। তাহলে নতুন করে মাছ চাষ করে ঋণটা পরিশোধ করতে পারবো। তারা আমাদের আশ্বাস দেন তার পর আমরা পুনরায় ২০ লাখ টাকার মাছ ছেড়ে খাবার দেওয়া শুরু করি। সাথে ৫ পুকুরের গাভীতে ৩ হাজার কলা গাছ আছে। এই অবস্থায় এখনও আমাদের সময় থাকতে তবিবর ও তরিকুল আমাদের কলা কেটে বিক্রি শুরু করেছে আর বিল ও পুকুর দখল নিয়ে মাছ চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছে। আমরা আর বিলের যেতে পারছি না।
বিল দখলের চিত্র সরেজমিনে দেখতে গেলে বর্তমান বিলের মালিক ও গার্ড ওহেদুল ইসলাম জানান, এখন বিএনপির আন্ডারে বিল চাষ হচ্ছে। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি তবিবর রহমান তবি।
মহেশপুর হালদার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও বিলের ইজারা গ্রহীতা সাধন হালদার জানান, চলতি বছর ৩০ চৈত্র পর্যন্ত বিলের মালিকানা আছে জালাল ও টিপুরা গত বছর আমার কাছ থেকে সাবলিজ নিয়ে তারা মাছ চাষ করছে। গায়ের জোরে তবি আর তরিকুল তাদের সময় থাকার পরও দখল করে নিয়েছে। আমাদের বিলটা লুট হওয়ার পর আমি আর যায়নি। আমি এই বছর শুধু খাজনা দিয়েছি ৪০ লাখ টাকা যেটা তারা করছে একে বারেই অন্যায় এটা মেনে নেয়া যায় না। তার পরও হজম করতে হচ্ছে।
দোবিলা বিলের সাবলিজ গ্রহিতা আয়ুব হোসেন জানান, ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য ৪০ লাখ ৩ হাজার টাকা সাধন হালদারের সমিতির নামে জমা দিয়ে তার কাছ থেকে লিখে নিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে একটি অংশের জন্য তবি ও তরিকুল আর একটি অংশের জন্য ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক সোহাগ সরকারের সাথে চুক্তি হয়েছে। আর একটি অংশ আমি নিজে চাষ করবো। ১ বৈশাখ থেকে বিল চাষ শুরু করবো বলে তিনি জানান।
আজমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মোজাম জানান, আমার ইউনিয়নটি বিএনপির ঘাটি হিসাবে পরিচিত তার মধ্যে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এক চেটিয়া বিএনপির ভোট। আমরা ৪ হাজার ২শ ভোটের মধ্যে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ পেতাম । বর্তমানে যেভাবে দখল বাণিজ্য চলছে তাতে ১২/১৩০০ পাবো কিনা সন্দেহ।
ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মফিজুর রহমান মাস্টার জানান, ৫ আগস্টের পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি /সম্পাদক ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি করেছিলো। ৩০ চৈত্র আসার আগেই তাদের বিল দখল করে নিয়েছে আমি শুনেছি। কিন্তু মহেশপুর উপজেলা ও পৌরসভার ২ নেতা বিল নিয়ন্ত্রণ করছেন।
ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক সোহাগ সরকার জানান, পরে আপনার সাথে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন। উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাবু জানান, যদি কেউ অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত হয় প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে জেলায় অভিযোগ দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জানান, সাধন হালদারের কাছ থেকে লিখে নিয়ে বিল কান্দার লোকেরা বিল চাষ করছি। আজমপুর ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি তবিবর রহমান তবি জানান, দো বিলার ৩টা অংশ সাধন হালদারের কাছ থেকে পরবর্তি এক বছরের বাংলা ১৪৩২ সাল পর্যন্ত লিখে নেয়া হয়েছে। আমরা তার একটি অংশে মাছ চাষ করছি। আমি আওয়ামী লীগের কাউকে কোন শেয়ার দিইনি।