বিল্লাল হোসেন: যশোরের চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা গ্রামের মতিয়ার রহমান (৪৫) দীর্ঘদিন কোমরের যন্ত্রনায় ভুগছেন। রোববার (১০ আগস্ট) এসেছিলেন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আউটডোরে অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখাতে। ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দেখাতে যান ১২২ নম্বর কক্ষে। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে কোমরের এক্সরে করার নির্দেশনা দেন। তিনি স্বল্প খরচে সরকারি এ হাসপাতাল থেকে ডিআর মেশিনে এক্সরে করার ৩ মিনিটে প্রিন্ট রিপোর্ট হাতে পেয়ে মহাখুশি। আধুনিক এক্সরে মেশিন হাসপাতালে প্রথমবারের মত সংযোজন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে এক্সরে মেশিনের কার্যক্রম শুরু হবে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে মোট ৪টি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন ছিল। এরমধ্যে দুইটি ডিজিটাল সিআর ৫০০এমএ ও ফুজি সি আর ৫০০এমএ। এবার নতুন করে যুক্ত হল ডি আর (ডিজিটাল রেডিওগ্রাফি) ৫০০এমএ এক্সরে মেশিন। সরকারি এই হাসপাতালে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন এটাই প্রথম। এই এক্সরে মেশিনের মূল্য কোটি টাকার বেশি। এটি দিয়ে যেকোনো ধরনের এক্সরে করা যাবে। মেশিনের ডাবল ডিটেক্টর থাকাতে এক্সপোজ দেওয়ার সাথেই ছবি চলে আসবে। এক্সরে করার কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীকে প্রিন্ট প্রদান করা যাবে। স্বাভাবিকভাবে এসব মেশিন ১০ বছর সার্ভিস দেয়।
রোববার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বারইখালি গ্রাম থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর এক্সরেসেবা নিতে আসা শরিফুল ইসলাম ওরফে শরিফ জানান, তাকে কয়েক মিনিটের মধ্যে এক্সরেসেবা দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি একদিনে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন। এই অত্যাধুনিক এক্সরে মেশিন সংযোজন হওয়ায় তার মত অনেক রোগী উপকৃত হবেন।
হাসপাতালের এক্সরে টেকনেশিয়ান মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, নতুন এক্সরে মেশিনে মানুষের আন্তরিকতার সাথে সেবা দেয়া হবে। দ্রুত ফ্লিম বের হওয়ায় এক্সরে পরিমাণও বাড়ানো সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, এর আগে সরকারি এই হাসপাতালে ১২৮ স্লাইসের অত্যাধুনিক একটি সিটিস্ক্যান মেশিন সংযোজন করা হয়। খুলনা বিভাগে এত উন্নত মানের সিটিস্ক্যান মেশিন আর একটিও নেই।
হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ জানান, ডিজিটাল ডিআর এক্সরে মেশিন স্থাপনের মধ্য দিয়ে যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হল। রোগীদের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গের নিখুঁজ এক্সরে করতে মেশিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চকচকে এক্সরে করার জন্য রোগীদের ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটতে হবে না। সরকারি হাসপাতালে কম টাকায় করতে পারবেন ভাল মানের এক্সরে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য ডিআর এক্সরে মেশিনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে এক্সরে করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে সেবা কার্যক্রম চালু করা হবে। রোগীরা সরকার নির্ধারিত ২০০ টাকা মূল্যে উন্নত এক্সরে করতে পারবেন। এনালগ মেশিনে এক্সরে করার পর রিপোর্টের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না। ৩/৪ মেশিনের মধ্যে রোগীরা রিপোর্টের ফ্লিম পেয়ে যাবেন। তিনি আরও জানান, আধুুনিক এক্সরে ইমেজিং সিস্টেম যা প্রচলিত ফ্লিম ভিত্তিক এক্সরে পদ্ধতির চেয়ে উন্নততর। ডিজিটাল ডিটেক্টর ব্যবহারের কারণে দ্রুত ইমেজ পাওয়া যায়। ইমেজ অনেক চকচকে হয়।