নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে আয়োজন করা হলো শরতের রূপ ও আবহকে কেন্দ্র করে ‘শরৎ বন্দনা’ শীর্ষক
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কল্পনা ‘ কাব্যগ্রন্থ শরৎ কবিতার পঙক্তি ধারণ করে এই অনুষ্ঠান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গোটা এই অনুষ্ঠান জুড়েই ছিল শুধুই মুগ্ধতা।
অনুষ্ঠানে নাচ, গান ও আবৃত্তিতে শরতের সৌন্দর্যকেই তুলে ধরা হয়। ঠিক সন্ধ্যা ৫ টা ৩১ মিনিটে অনুষ্ঠানের শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী আলারিপ্পু নৃত্য ছন্দে। আলারিপ্পু হলো ভরতনাট্যম শাস্ত্রীয় নৃত্যের ঐতিহ্যবাহী প্রথম অংশ, যার অর্থ হলো ‘ ফুলের কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়া।
নৃত্যে অংশ নেয় অপরাজিতা, সৌম্যদীপ,ফাতিমা, ঐন্দ্রী, অঙ্কিতা ও অন্বেষা।
কখনো ঘন কালো মেঘ, বর্ষা, কখনো তাপদাহ আবার কখনো শীতল আমেজ। ঋতুর এই অপরূপ খেলার মাঝে প্রশান্তি জুড়িয়ে নেয় মিলনায়তন পূর্ণ সংগীত পিপাসু হৃদয়ের।
একক, দ্বৈত ও দলীয় সব পরিবেশনার মাঝে ছিল কেবলই শরৎ বন্দনা। ভেসে বেড়ানো মেঘের প্রান্ত ছেড়ে উড়ে চলা পাখপাকালির ঝাঁক, কাশবনে ডাহুকের ডাক, বিল ঝিলের ডুবো জলে জড়িয়ে থাকা শালুক পাতা, আঁধারের বুক চিরে জোনাকির রূপালী সেলাই ঘোর লাগা চাঁদের আলো কি নেই এই ঋতুর কাছে। শরতের এক আনন্দময় ঘ্রাণ আছে। হয়তো এজন্য বলা হয়ে থাকে প্রকৃতিতে শরৎ আসে ‘নববধু’র মতো।
শরৎ বন্দনার আড়াই ঘন্টার অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ছোট বড় শতাধিক শিল্পী। পরিবেশন করে তাদের শ্রেষ্ঠতা।
একক সংগীত পরিবেশন করে মুস্তাহীদ,নাহার, গোবিন্দ, সমৃদ্ধি, কানিজ,সুব্রত, শ্রেষ্ঠা, সৌহার্দ্য, আইয়ান,বুশরা ও শ্রময়ী ।
বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সঙ্গে শরৎ এর কথামালায় সজ্জিত শরৎ উৎসবে হিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে সম্প্রীতির সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষা। উচ্চারিত হয়েছে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বৈষম্যহীন স্বদেশ গড়ার প্রত্যয়। শরতের শুভ্রতা প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য বলে জানান উদীচী যশোর শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি আমিনুর রহমান হিরু। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা গ্রামে বেড়ে উঠেছি, তারা শাপলার বিলে সাঁতার কেটেছি। কাশবনে ঘুরে বেড়িয়েছি। তাদের অনুভবে শরৎ ধরা দেয় অনন্য রূপে। শহরের শিশুদের কাছে হয়তো এই রূপ অচেনা। আমাদের অভিভাবকদের দায় রয়েছে, আমাদের সন্তানদেরকে প্রকৃতির এই রূপ-বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানানোর। গ্রামে এখনো কিছু কিছু প্রকৃতির বৈচিত্র্য দেখা যায়। এই রূপ-বৈচিত্র্যের সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। শরৎ ঋতু আমাদের শুদ্ধ সুন্দর শুভ্রতায় বার্তা দেয়। এই শরৎ সকলের জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক।’
পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল উচ্ছ্বাস, প্রাণচাঞ্চল্য ও উৎসবের আবহ। সমস্ত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কাজী শাহেদ নওয়াজ।