Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒যশোরে নাগরিক শোকসভা

‘মুক্তিযুদ্ধ ও সাংবাদিকতার সংকটের এই সময়ে রুকুনউদ্দৌলাহকে দরকার ছিলো’

এখন সময়: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর , ২০২৫, ০৭:৪০:০৪ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট  ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ’র নাগরিক শোক সভায়  বক্তারা বলেছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িকতা চেতনাকে ধারণ করে গেছেন সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ’র। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেননি।  মুক্তিযুদ্ধ ও সাংবাদিকতার সংকটের এই সময়ে  রুকুনউদ্দৌলাহকে আমাদের দরকার ছিল।

বক্তারা বলেন- রুকুনউদ্দৌলাহ্ কলম কোন কৃত্রিমতা নয়, তার কলম ছিলো সোজা সরল। তিনি সমাজের অসংগতি, মাটি মানুষ আর শেকড়ের কথা তুলে আনতেন। সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি জীবনে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তাঁর কলম কখনো থেমে থাকেনি। কেউ পথ হারালে পথের সন্ধান চাইলে তাকে পথের সন্ধান দিতেন। সাংবাদিকতার পাঠশালা ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ্। তাই তো তিনি গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিকতা পছন্দ করতেন।

শনিবার বিকালে যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্র নাগরিক শোকসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।  নাগরিক শোকসভার কমিটির আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেত্রী হাবিবা শেফা। এতে তার দীর্ঘ কর্মময় জীবন, সামাজিক অঙ্গনে অসামান্য অবদান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বিভিন্ন রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সামাজিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা। শুরুতেই তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গান পরিবেশন করেন উদীচী যশোর সংসদের শিল্পীগোষ্ঠী। পরে এক মিনিট নিরাবতা পালন শেষে শুরু হয় শোকসভা।  শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব ও যশোর  সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে) ‘র সভাপতি সাজেদ রহমান। 

স্মরণসভায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘যশোরের সাংবাদিকদের অভিভাবক ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ্। বহুমাত্রিক কাজের মাধ্যমে বেড়িয়েছেন যশোরসহ এই অঞ্চলে। তিনি ছিলেন যেমন কঠোর, তেমনি কমল। তার কলমকে কেউ বাঁকাতে পারেনি। দেশে সাংবাদিকতা কাজের পাশাপাশি সাংবাদিক তৈরিতেও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সাংবাদিকদের যে সার্বজনীন হওয়ার উদাহরণ রুকুনউদ্দৌলাহ্।’ 

যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন- ‘রুকুনউদ্দৌলাহ্ আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন তিনি। টাকার কাছে তিনি বিক্রি হয়নি। অনেক দুর্দিনে চেতনার বাইরে যায়নি। রুকুনউদ্দৌলাহ্ সাংবাদিক তৈরির পাঠশালা ছিলেন। ঢাকা ও যশোরের অনেক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকতা তার কাছে দিক্ষা নিয়েছিলেন। বহুমাত্রিক কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বাহক ছিলেন। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের রুকুনউদ্দৌলাহর লেখা বই পড়লে নিজেকে নানা বিষয়ে সমৃদ্ধ করতে পারবে।’ 

যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন বলেন- ‘সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধাদের যে সংকট চলছে, সাংবাদিকতার যে সংকট চলছে, রুকুনউদ্দৌলাহর মতো সাহসী সাংবাদিককে এই সময়ে দরকার ছিলো। আমরা যা কিছু শিখেছি, বা নতুন প্রজন্মকে শিখেয়েছে আমরা সবাই তার চেতনাকে ধারণ করি।’

মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায় বলেন, ‘যশোরের দুজন নক্ষত্রকে হারিয়েছি। একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুকুমার দাস আর সাংবাদিকতায় নক্ষত্র রুকুনউদ্দৌলাহ্ব । বলিষ্ঠ সৎ জাগরুক সাংবাদিক ছিলেন রুকুনউদ্দৌলাহ। পারিবারিক ভাবেও তারা সমৃদ্ধ। এ দেশকে বড্ড ভালোবাসতেন তিনি। সাহসী, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যশোরের পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। সর্বজনস্বীকৃত এই গুণী ব্যক্তি হারানোর শূণ্যতা কখনই পুরণ হবার নয়।’ 

প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘রুকুনউদ্দৌলাহর তার হাত ধরে অনেক সাংবাদিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকতায় সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন সবসময়। তিনি সংবাদ সৃষ্টি করেছে, সাংবাদিক সৃষ্টি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন, ধার করা ইতিহাস লিখেনি কখনো। সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন। তিনি তার আদর্শের জায়গা অটল ছিলেন। আত্মপ্রত্যয় মানুষ ছিলেন। এই  অঞ্চলের সাহসী সাংবাদিকতা পথ প্রদর্শক ছিলেন। তার সাংবাদিকতার মাধ্যমে চোরাচালানের ট্রেন থেমেছিলো। তার আদর্শ ও অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার মধ্য তাকে বাঁচিয়ে রাখবে।’

সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহর মেয়ে সুম্মিতা দৌলা মিষ্টি তার বাবাকে নিয়ে নাগরিক শোকসভা করায় ধন্যবাদ জানান আয়োজনকদের। তিনি বলেন তার বাবা তার আদর্শের। তিনি হৃদয়ে থাকবেন সবসময়। বক্তারা সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহর হাতে গড়া মুক্তিযোদ্ধা পাঠাগার ও পাক্ষিক সংবাদপত্র যশোরের কাগজ চালু রাখার দাবি জানান।

নাগরিক শোকসভা কমিটির সদস্য মিলন রহমান ও সাংস্কৃতিক কর্মী কাজী শাহেদ নওয়াজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন  প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জনউদ্যোগের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদ, উদীচী যশোর সংসদের সভাপতি আমিনুর রহমান হিরু, যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, জয়তী সোসাইটি নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, আইডিইবি যশোরের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রুহুল আমিন। প্রসঙ্গত,  গত ২২ আগস্ট যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ মারা যান। গত কয়েকমাস ধরে তিনি হার্ট ও কিডনিজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ‘গ্রাম-গ্রামান্তরে’র লেখক খ্যাতিমান এই সাংবাদিক পাঁচ দশকের বেশি সময় সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি চ্যানেল আই, রেডিও টুডেতে কাজ করেছেন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্ফুলিঙ্গ, দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক রানার, দৈনিক কল্যাণ’-এ বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে যশোর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক যশোরের কাগজের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। এ পেশায় সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)