নিউজ ডেস্ক: সপ্তাহব্যাপী তীব্র বিমান হামলার পর গাজা সিটিতে স্থল অভিযানের মূল পর্যায় শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। রাতভর ভারি বোমা হামলা হওয়ার কথা জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার এই অভিযানের ঘোষণা দিয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কার্টজ এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন ‘গাজা জ্বলছে।’ নগরীর ওপর বিমান, সমুদ্র ও স্থল তিন দিক দিয়ে আক্রমণ চলছে। এ পর্যন্ত ৬৮ জন নিহতের খবর দিয়েছে সংবাদ মাধ্যম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিকট বিস্ফোরণ দেখার কথা জানিয়েছেন। বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। তারা মঙ্গলবারের বোমা হামলাকে গাজায় দুইবছরের যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক বলে বর্ণনা করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এর কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থলসেনারা গাজা সিটির অনেক ভেতরে প্রবেশ করছে। কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তারা। আগামী দিনগুলোতে সেনা সংখ্যা আরও বাড়বে।
গাজা সিটিতে ৩ হাজার হামাস যোদ্ধা রয়েছে বলে বিশ্বাস আইডিএফ এর। তাদেরকে মোকাবেলায় এই বাড়তি সেনা নামানো হবে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মঙ্গলবার ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন। এর নিহতদের বেশিরভাগই গাজা সিটির।
সেখানে ইসরায়েলের বিমান হামলা চলার পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে ইসরায়েলি ট্যাংক ঢুকে পড়ার খবর জানিয়েছে বাসিন্দারা। তাদের অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছেন, যদিও তাদের নিরাপদে যাওয়ার মতো কোনও জায়গা নেই।
গাজার সবচেয়ে বড় এই শহরে এখনো কয়েক লাখ বাসিন্দা অবস্থান করছেন, যেখানে ইতোমধ্যে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে অভিযানটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, গাজা সিটি হামাসের শেষ কয়েকটি শক্ত ঘাঁটির একটি।
ইসরায়েল নতুন করে গাজা সিটির বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণ এবং পশ্চিমের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে যতদিন প্রয়োজন ততদিন সেনারা গাজা সিটিতে অভিযান চালাবে।
তিনি আরও বলেন, সেনারা অভিযান দ্রুত শেষ করতে চায় এবং জিম্মি ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
‘চারিদিকে বোমা’
“গত রাতটা ছিল সবচেয়ে কঠিন রাতগুলোর একটি,” বিবিসি নিউজডে-কে এমনটাই জানিয়েছেন গাজা সিটির বাসিন্দা ইমাদ।
তিনি বলেন, চারদিকে “বোমা পড়ছে,” অসংখ্য ভবন টার্গেট করা হচ্ছে। আকাশজুড়ে ধোঁয়া আর আগুন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
“বিভিন্ন জায়গা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল,” বলেন ইমাদ।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি দেখেছেন, মানুষ দিকবিদিক ছুটছে—কোথায় যাবে তা জানে না। হাসপাতালগুলো আহত রোগীতে ভরা, যাদের চিকিৎসা দেওয়ারও সুযোগ নেই, দক্ষিণে নেওয়ারও উপায় নেই।
“পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহৃ আমরা খুব একটা আশাবাদী নই, তবে অন্তত আশা করতে তো পারি,” বলেন ইমাদ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ইসরায়েলের সরকারি তথ্যের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এর জবাবে ইসরায়েলের পরিচালিত সামরিক অভিযানে গাজায় প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। এটি হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য।