Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

মোংলা বন্দরের ৬ বছরে ‘ইনার বার’ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শেষ ৭৩ শতাংশ

এখন সময়: সোমবার, ১৭ নভেম্বর , ২০২৫, ০৬:০৩:০২ পিএম

 

ম.ম.রবি ডাকুয়া,মোংলা: দীর্ঘ ৫ বছর ৭ মাসেও শেষ হয়নি মোংলা বন্দর চ্যানেল ‘ইনার বার’ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। তিন ধাপে ১৯৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি হলেও এ পর্যন্ত খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৭৩ শতাংশ।

মোংলা বন্দর চ্যানেলে তিন ধাপে ১৯৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি হলেও এ পর্যন্ত খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৭৩ শতাংশ।

জানা যায়, বন্দর সার্বক্ষণিক সচল রাখতে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটারের গভীরতা বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি চলাচল করতে চ্যানেল ড্রেজিং ‘ইনার বার’ নামে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। কিন্তু বালু ডাম্পিংয়ের জমি ও অন্যান্য জটিলতায় প্রায় এক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় শুরু হয় ড্রেজিংয়ের কাজ। এ ছাড়া তিন ধাপে ১৯৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি হলেও এ পর্যন্ত খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৭৩ শতাংশ। তবে চলতি অর্থ বছরের শেষের মধ্যে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হবে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বন্দর জেটিতে সহজে বেশি গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন নিশ্চিত করতে প্রথমে ‘আউটার বার’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সেই আউটারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় পর্যায় ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ইনার বার’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০২১ সালে ১৩ মার্চ প্রকল্পটি উদ্বোধন হওয়ার পর ১০ এপ্রিল চ্যানেল ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এ চ্যানেল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল ২০২২ সালে ৩০ জুন। কিন্তু কিছু দিন কাজ চলমান থাকলেও নদী পুনরায় ভরাট হওয়া এবং বালু ডাম্পিংয়ের জমি না থাকায় ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার এক পর্যায় এক এক করে তিন দফায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯২ কোটি ২৭ লাখ টাকায়।

প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি করে পুনরায় ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে আবারও চ্যানেল ইনার বার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এরপর থেকেই আবারও ধীরগতিতে হচ্ছে ড্রেজিংয়ের কাজ।

প্রকল্প পরিচালকের মতে, গত ৫ বছর ৭ মাসে কাজ শেষ করতে পেরেছে মাত্র ৭৩ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শুরুতে হোপার ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ শুরু করলেও বন্ধের পরে বড় ড্রেজার বাদ দিয়ে এখন চলছে ছোট ছোট ড্রেজার দিয়ে মোংলা বন্দরের বড় চ্যানেলের কাজ। এতে কাজের ধীরগতি হওয়ার ফলে একদিকে যেমন চ্যানেল পুনরায় ভরাট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়তে যাচ্ছে সরকার, বন্দর ও আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, আশাছিল বন্দরের চ্যানেলের নাব্যতা সংকট নিরসনে এ প্রকল্পের মাধ্যমে পশুর চ্যানেলের জয়মনির গোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার নদীখনন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মযজ্ঞ শেষ হলে মোংলা বন্দরের গতিধারা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। ইনার বার চ্যানেলের বর্তমান গভীরতা ৫ দশমিক ৫ মিটারের কম।

বর্তমানে এই গভীরতায় জোয়ারের সুবিধা নিয়ে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে আসতে পারে। চলমান ‘ইনার বার’ ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এ বন্দরে ৯ দশমিক ৫০ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দর জেটিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ‘বন্দরকে গতিশীল, জাহাজ আগমন ও রাজস্ব বৃদ্ধিসহ ব্যবসায়ী বান্ধব আধুনিক বন্দরের রূপান্তরিত করতে হলে চ্যানেল ড্রেজিংসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।’

মোংলা বন্দরের ‘ইনার বার’ ড্রেজিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী বলেন, ‘বালু ডাম্পিংয়ের জমিসহ সব সমস্যা সমাধান করে পুরোদমে চলছে ড্রেজিংয়ের কাজ, অর্থ বছরের শেষের দিকে ড্রেজিং কাজ শেষ করতে পারবো। আর এ প্রকল্পটি সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হলে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটারের জাহাজ আসতে পারবে। ফলে আগের চেয়ে ২০ শতাংশ জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে বন্দরের রাজস্ব আয়।’

মোংলা বন্দর ইস্টিভিডরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা অপার সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে এ বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। তাই বন্দর জেটি এলাকায় আট বা আট দশমিক ৫০ মিটার গভীরতার ড্রেজিং করার ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের সহায়তায় ৯ দশমিক ৫০ থেকে ১০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ নির্বিঘ্নে হ্যান্ডল করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর সুফলে মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। জেটি এলাকায় ড্রেজিংয়ের ফলে এ বন্দরের গতিশীলতা আরও বাড়বে। তাই এ মোংলা বন্দরকে ব্যবহারের জন্য অন্যান্য জায়গার ব্যবসায়ীরা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে আগের তুলনায় জাহাজের আগমন ও আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহিন রহমান বলেন, ‘মোংলা বন্দরের পিপি জেটিতে (পার্মানেন্ট পোর্ট জেটি) সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্যে বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিং চলমান রয়েছে। বর্তমানে কন্টেইনার নিয়ে ৮ মিটার গভীরতার জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়ে পণ্য খালাস করছে। এই ট্রায়াল সফল হলে আমাদের আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটারের অধিক গভীরতার জাহাজ এই জেটিতে ভিড়তে পারবে। এ ছাড়া জেটিতে নাব্যতা বাড়াতে প্রতিনিয়ত জেটি সংলগ্ন এলাকায় বন্দরের নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করে জেটির নাব্য বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হচ্ছে। আমাদের গ্রহণ করা প্রকল্প শেষ হলে এবং সরকার ও ব্যবসায়ীদের সুনজর থাকলে এ বন্দর আন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত হবে বলে জানান বন্দরের চেয়ারম্যান।

বন্দরের ইনার বার প্রকল্পের মাধ্যমে চ্যানেল থেকে ২১৬.০৯ লাখ ঘনমিটার বালু ড্রেজিং করা হবে। আর ড্রেজিংয়ের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)