রাজয় রাব্বি, অভয়নগর (যশোর): ‘নানান রঙের ফুলের মেলা, খেজুরের গুড়ের যশোর জেলা’। শীতের আগমনী বার্তা যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, ঠিক তখনই যশোরের অভয়নগরে খেজুরগাছ প্রস্তুতে শুরু হয়েছে গাছিদের ব্যস্ততা। শীত জমাট বাঁধার আগেই গাছিদের তৎপরতায় গ্রামজুড়ে নেমেছে রস আর গুড় তৈরির প্রস্তুতি। দড়ি, দা, ঠুঙ্গি আর গাছ তোলার নানা সরঞ্জাম নিয়ে গাছিরা দিনভর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ বছর উপজেলাজুড়ে প্রায় ১ হাজার ৪শ’ ১০ গাছি গাছ তোলা ও রস সংগ্রহের কাজে নেমেছেন। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে গুড় উৎপাদন।
সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে খেজুরগাছের মাথা পরিষ্কারের কাজ। রাস্তার ধারে কিংবা জমির আইলে সারি সারি খেজুরগাছ। গাছিদের দ্রুত পদচারণা-এক গাছ থেকে আরেক গাছে। ধারালো দা-এর টুক শব্দে ভোরের বাতাসে তৈরি হচ্ছে শীতের আগমনী ছন্দ। নিপুণ হাতে গাছের মাথা পরিষ্কার করে দুই সপ্তাহ বিশ্রাম দিতে হবে, এরপরই শুরু হবে রস সংগ্রহ। খেজুর রসকে ঘিরে গ্রামবাংলায় তৈরি হয় শীতের আলাদা এক আবহ। শীত যত বাড়ে, রসের মাধুর্যও তত গভীর হয়। ভোরের গরম রস, সন্ধ্যার রস, আর ঐতিহ্যবাহী পাটালি গুড় শীতের স্বাদকে পূর্ণ করে তোলে এগুলো। পিঠা আর পায়েস তৈরিতে খেজুরের গুড় আবহমান কাল ধরে গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের নাউলী গ্রামের বাপ্পি ফকির বলেন, ‘আমরা খেজুরগাছ কাটা শুরু করেছি। যশোর জেলার খেজুর রস, গুড় আর পাটালির জন্য আমরা গর্ব করি। এই স্বাদই আমাদের পরিচয়।’
উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের রতন কুমার বলেন, ‘আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রস বের হবে। তাই এ বছর আরও বেশি গাছ কেটেছি। যশোরের ঐতিহ্যবাহী গুড়-পাটালি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করব। আশা করি ভালো লাভ হবে।’
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লাভলী খাতুন বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে খেজুরের গুড় জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার রস আহরণযোগ্য খেজুরগাছ রয়েছে, যেগুলো থেকে প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। এই গুড় যেন ভেজালমুক্ত থাকে সে বিষয়ে প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তৎপর থাকবে।