নূরুল হক, মণিরামপুর (যশোর): মণিরামপুরের গোয়ালবাড়ি গ্রামের অসচ্ছ্বল বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীর রয়েছে মাত্র আট শতাংশ জমি। সেখানে রয়েছে কয়েকটি নারকেল গাছ। কিন্তু অর্থাভাবে এখনও বসত বাড়ি নির্মাণ করতে পারেননি তিনি। একবুক স্বপ্ন নিয়ে বারবার আবেদন করেও সরকারের বীর নিবাসের বাড়ি তিনি বরাদ্দ পাননি। উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি ঠাঁই নিয়েছেন গুচ্ছগ্রামে ছেলের সংসারে। আরশাদ আলীর আক্ষেপ আর কত অসচ্ছ্বল হলে বীর নিবাসে ঠাঁই হবে তার।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের মৃত মোন্তেক গাজীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী গাজী স্ত্রী এবং ছয় ছেলে নিয়ে সরকারের খাসজমিতে টিনসেড ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা এবং মৌয়ালের কাজ করে (মধু ভেঙে গ্রামে গ্রামে বিক্রি) তিনি সংসার চালাতেন। ছয় ছেলেকে বিয়েও দিয়েছেন তিনি। রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে মৃত্যু হয় স্ত্রী জামেলা বেগমের। ২০২৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা আরশাদের বসতবাড়ি ভেঙে সেই খাস জমিতে গুচ্ছগ্রাম গড়ে তোলা হয়। উপজেলা প্রশাসন ওই গুচ্ছগ্রামে দুইটি ঘর বরাদ্দ দেন মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীর ছেলে হেদায়েত উল্লাহ গাজী ও তার শ্বাশুড়ি নার্গিস বেগমের নামে। সেই থেকে আরশাদ আলী ছেলের সংসারে রয়েছেন। ছেলেরা এখন দিনমজুরী করে সংসার চালায়। সংসারে একটু সুখের আশায় ছেলে হেদায়েত উল্লাহকে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এলাকার বাবলুর রহমান নামে এক আদম ব্যাপারীর কাছে তুলে দেন। কিন্তু বাবলুর রহমান ওই টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার কুড়ি হাজারের মধ্যে প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি দেন ১৪ হাজার টাকা। এছাড়া আরো ধারদেনা করে গুচ্ছগ্রামের পাশে আট শতক জমি কেনেন আরশাদ আলী। কিন্তু অর্থাভাবে তিনি বসতবাড়ি নির্মাণ করতে পারেননি। ফলে তিনি সরকারের বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ পাবার জন্য কয়েকবার আবেদন করেন।
মণিরামপুরে বীর নিবাসে ইতোমধ্যে ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত জুন মাসে আরো পাঁচটি বাড়ি বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে আরশাদের ঠাঁই হয়নি ওই তালিকায়। তবে পাঁচটির মধ্যে একটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ধণাঢ্য আলাউদ্দিনের নামে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষ তার সেই বরাদ্দ বাতিল করেন। আরশাদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, আর কত অসচ্ছ্বল হলে বীর নিবাসে আমার ঠাঁই হবে। অবশ্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ইসাহক আলী বলেন, অসচ্ছ্বল মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলীকে বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, আরশাদ আলীর আবেদন পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।