স্পন্দন ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনে অধ্যাদেশ অনুমোদন করা হয়েছে, যাতে সংসদের ভোটের ব্যালট সাদাকালো ও গণভোটেরটি রঙিন আকারে ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একই সঙ্গে মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা এ অধ্যাদেশে পোস্টাল ব্যালটেও গণভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরে বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তার সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব আখতার হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) সম্পর্কিত প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মতামত নিতে গণভোট কীভাবে হবে সেটা ঠিক করতে গণভোট অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ অধ্যাদেশ আজকে মন্ত্রিপরিষদের সভায় চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। আজকে বা কালকের মধ্যে এটার গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে যাবে।”
বিফ্রিংয়ে জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গণভোটে প্রশ্ন থাকবে একটি। সেটা হচ্ছে, “আপনি জুলাই জাতীয় সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫ এবং জুলাই সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?”
ব্যালটে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ দুইটা বক্স থাকবে, যারা সম্মতি জানাচ্ছেন তারা হ্যাঁ ভোট দেবেন এবং যারা এর পক্ষে নন তারা ‘না’ ভোট দেবেন।
গণভোটের প্রস্তাবগুলো হচ্ছে
ক. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুকক্ষ বিশিষ্ট এবং সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হতে ডেপুটি স্পিকার এবং কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছে সেসব বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, এই ৩০টি প্রস্তাব গণভোট অধ্যাদেশের সংযুক্তিতে যোগ করে দেওয়া হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভোট নিয়ে আরও যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বিফ্রিংয়ে তুলে ধরা হয়।
সেগুলো হল
>> আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে সেগুলোতেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
>> সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা ভোটার তালিকাই হবে গণভোটের ভোটার তালিকা।
>> সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময়ই হবে গণভোট গ্রহণের সময়।
>> গণভোটের ব্যালট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট থেকে পৃথক হবে।
>> সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন যেসব রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার নিয়োগ করবে ওনারাই গণভোটে রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
>> কোনো কারণে ভোট গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হলে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের ফলাফল দ্বারা গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা সম্ভব নয়; শুধুমাত্র তখন কমিশন ওই সমস্ত কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ দেবে।
>> গণভোটের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালেটের সুযোগও থাকছে।
বিফ্রিংয়ে ইসি সচিব আখতার হোসেন ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত হওয়ার তথ্য দিয়ে বলেন, ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালি, স্টাম্প্যাড পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ আছে।
ভোটে দুই রঙের ব্যালট পেপার থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাদা পেইজের উপরে কালো প্রিন্টের ব্যালট পেপার। আর রঙিন কাগজ ব্যবহার করা হবে গণভোটের জন্য। প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট দিতে পারবেন।