নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর : পরনে নোংরা ও ছেড়া বস্ত্র। কোন রকম লজ্জা স্থান ঢেকে আছে। সাদা শ্মশ্রুমন্ডিত পাকা দাড়ি। দীর্ঘাকারের গোঁফ নুইয়ে পড়ছে গাল। সারাদিন কাগজের টুকরো কুড়িয়ে কি যেন খুঁজে বেড়ান তিনি। অথচ তিনি ছিলেন এক সময়ের প্রখর মেধাবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দরিদ্র পরিবারের সন্তান শেখ জামশেদ আলী স্কুলে পড়াকালিন একই শ্রেনিতে পড়ুয়া বন্ধুর বাসায় গৃহশিক্ষকের পাশাপাশি লেখাপড়া করতেন। এর বাইরে একই ক্লাসের বন্ধুদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতেন।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল মালেকের ছেলে জামসেদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালিন তিনি পাগল হয়ে যান। স্বজনরা বাড়িতে এনে সুস্থ করার প্রানপণ চেষ্টা করলেও জামশেদ আলী আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। স্বজনদের শত চেষ্টা বিফলে যায়। ছাত্র জীবনে কোন ধরনের নেশায় আসক্ত না থাকা জামশেদ আলী মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিছু দিন পর পর বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। স্বজনরা খুঁেজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পর বর্তমানে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ভবঘুরে উন্মাদ হয়ে ঘুরে বেড়ান।
জামশেদ আলীর স্কুল ও কলেজ জীবনের বন্ধু প্রাক্তন এপিপি এ্যাড. বশির আহম্মেদ খান বলেন, ১৯৯১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে ৭৮৮ নম্বর পেয়ে উপজেলা পর্যায় প্রথম হন জামশেদ। কিছু নম্বরের জন্য যশোর বোর্ডে মেধাতালিকায় স্থান পায়নি। এইচএসসি পরীক্ষাতেও তিনি স্টার মার্ক পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৩-৯৪ সেশনে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় । এরপর সে পাগল হয়ে যায়।
জামশেদ আলীর ছোট ভাই শেখ মোশাররফ হোসেন জানান- পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাইকে সুস্থ করতে অনেক ডাক্তার-কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ভাই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। সর্বশেষ পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ভাই সব সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলায় সেখানে ভর্তি করাতে সমস্যা হয়। তিনি ভাইকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।