নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যার প্রতিবাদে যশোর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে যশোরের সর্বস্তরের ছাত্রজনতার ব্যানারে মুজিব সড়কের মডেল মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি মুজিব সড়ক হয়ে দড়াটানা ভৈরব চত্বর, শহীদ জুলাই স্মৃতি স্তম্ভ প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ চলাকালে ছাত্র জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ‘আমরা সবাই হাদি হবো’ হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা’সহ নানা স্লোগান দেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির যশোর জেলা প্রধান সমন্বয়ক নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘হাদীর মতো একজন দেশপ্রেমিককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা ন্যাক্কারজনক অপরাধ। তিনি ছিলেন দেশের অমূল্য সম্পদ।’ তিনি হত্যাকারীদের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, আগামী দিনের বাংলাদেশ পরিচালনায় যারা বাধা সৃষ্টি করবে, সেই ধরনের শক্তিকে আমরা ক্ষমতায় দেখতে চাই না। আজ যশোরসহ সারাদেশের ছাত্রজনতা ফুঁসে উঠেছে। এই হত্যার বিচার না হলে ভবিষ্যতে কোনো রাজনীতিবিদই নিরাপদে থাকতে পারবেন না। সমাবেশ শেষে শহীদ মিনারে শহীদ শরীফ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) সাকিব শাহরিয়ার, জাগপার প্রেসিডিয়ার সদস্য নিজামুদ্দিন অমিতসহ সর্বস্তরের ছাত্রজনতা অংশ নেন। এদিকে, এর আগে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। হাদির মৃত্যুর খবর শোনার পরপরই বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক যশোর চৌগাছা সড়কে অবস্থান নেন। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘হাদি ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে?’, ‘যে ভারত খুনি পালে, সেই ভারত ভেঙে দাও’, ‘ভারতীয় আধিপত্য ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ছাত্রলীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব-জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আপোস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’ এবং ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় কর্মসূচি। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইএসটি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ওসামা, জিইবিটি বিভাগের শিক্ষার্থী জালিস মাহমুদ, পিইএসএস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাফি এবং আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম মিনহাজ। বিক্ষোভে ইএসটি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওসামা বলেন-‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত পরিকল্পিতভাবে এ দেশের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে শরীফ ওসমান হাদিকেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই-আগামী দিনে কেউ যদি বাংলাদেশকে ভারতের কলোনি বানাতে চায়, তবে বাংলাদেশের যুবসমাজ কখনো তা মেনে নেবে না। দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ-এখানে কোনো ভিনদেশি আধিপত্য চলবে না।’ এর আগে, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে (এসজিএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।