Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

পুরো বাংলাদেশটাই দুর্নীতিগ্রস্ত-যা পারেন লেখেন!

এখন সময়: রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর , ২০২৫, ১১:০১:০৮ পিএম

শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : পুরো বাংলাদেশটাই দুর্নীতিগ্রস্ত-লেখেন! যত পারেন লেখেন! দেশের সব পত্রিকা লিখেছে, তাতে কী হয়েছে ? এভাবেই সাংবাদিক পরিচয় জানতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শার্শা উপজেলা প্রকৗশলী ছানাউল্লাহ হক।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর ২৫) দুপুর ১২টার দিকে যশোরের শার্শা উপজেলার বহুল আলোচিত সাতমাইল-গোগা ১০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় কথা বলেন তিনি।
প্রকৌশলী ছানাউল্লাহ হক বলেন, “যারা কাজের মান খারাপ হওয়ায় রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল-তারাই আবার টাকা খেয়ে কাজ চালু করেছে। আমি দশ দিন পরে রিপোর্ট দেবো, সব ঠিক আছে। কোথাও কোনো গরমিল নেই।” নিম্নমানের পাথর, ময়লাযুক্ত খোয়া, পুরনো সামগ্রী, রড ও সিমেন্টের মাত্রা কম থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন-“এগুলো আমলে আসবে না।”
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার মতো ‘রুচি নেই’ বলেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। বলেন, “যা লেখার লিখেছেন, আরও লেখেন-এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার মতো রুচি আমার নেই।”
এদিকে, কথোপকথনের মধ্যেই এলজিইডির আরেক কর্মকর্তা প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করে জানতে চান-এই সড়ক নির্মাণ নিয়ে কোন সাংবাদিক তার কাছে ফোন দিয়েছেন। ওই সাংবাদিকের নাম্বার চাইতে গিয়ে তিনি বলেন, “ঠিকাদারের লোক এসেছে-এদের দিয়ে শাসিয়ে দিচ্ছি।” প্রকৌশলীর কক্ষে চা পরিবেশন করা হলেও এমন পরিবেশে তা গ্রহণ না করেই কক্ষ ত্যাগ করেন উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকরা।
পরে এ বিষয়ে কথা হয় শার্শা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক শাহারিয়ার মাহমুদ রঞ্জুর সঙ্গে। তিনি জানান, বিষয়টি জানতে হবে। কাজটি এলজিইডির। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “একদিন কাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধের দিনে কীভাবে আবার অভিযুক্ত সড়কে সিসি ঢালাই শুরু হলো-তা আমার জানা নেই।” এ ধরনের উন্নয়নকাজে প্রকৌশলীর দপ্তরের আরও আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সাতমাইল-গোগা সড়কের বসতপুর বাজার এলাকায় প্রায় ৩৫০ মিটার সিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। ঢালাইয়ের কয়েকদিন পরই পায়ের আঙুল দিয়ে সামান্য গুতো দিলেই উঠে আসছিল সিমেন্ট-বালির সঙ্গে মেশানো খোয়া। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরের হস্তক্ষেপে কাজ বন্ধ করা হয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না যেতেই পুনরায় সিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু হওয়ায় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবারও নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক স্পন্দনসহ স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ হলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপজেলা প্রকৌশলী ছানাউল্লাহ হক।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নড়াইলের ‘ইডেন এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি দেয়া হলেও বাস্তবে যশোরের সাঈদ নামের এক ঠিকাদার কাজটি করছে। তার হাত অনেক লম্বা।’
শার্শা উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রকল্প উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বাগআঁচড়া ইউনিয়নের সাতমাইল থেকে গোগা বাজার পর্যন্ত ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বাজার এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার সিসি ঢালাইয়ের কাজ অন্তর্ভুক্ত।
ইতোমধ্যে সেতাই বাজারের কিছু অংশে কাজ শেষ হলেও বসতপুর স্কুল মোড় থেকে বাজারের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ মিটার সিসি ঢালাইয়ের কাজ চলমান।
তবে কাজের শুরু থেকেই নির্ধারিত নকশা ও মানদন্ড অনুসরণ না করে নিম্নমানের রড, ইট ও পাথরের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত অনুপাতে সিমেন্ট ব্যবহার না করায় ঢালাইয়ের গুণগত মান নিয়ে চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শার্শা উপজেলা প্রকৌশলী ছানাউল্লাহ হকের প্রত্যক্ষ যোগসাজসেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন নিম্নমানের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ঢালাইয়ের স্থানে সামান্য চাপ দিলেই উঠে আসছে ইটের খোয়া- পুরো প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)