বিল্লাল হোসেন : পর পর দুই দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যশোরে। শুক্রবারের তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার তাপমাত্রা নেমে আসে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রোববার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের প্রকোপ কমেনি। হাঁড়কাপানো এই শীতে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালেও ঠান্ডাজনিত রোগী আগের তুলনায় বেড়েছে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, হিমেল বাতাস কুয়াশার কারণে কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। এর আগে শনিবার তাপমাত্রা ছিলো ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃহস্পতিবার ছিলো ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ছিলো ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার ছিলো ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ছিলো ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার ছিলো ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও শনিবার ছিলো ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কনকনে শীতের কারণে নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত শীতের সঙ্গে কুয়াশা আচ্ছাদিত থাকে। ফলে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জালিয়ে অল্প গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে তারা উপার্জনের সন্ধানে যেতে পারছেন না। তারপরও অনেকেই বাঁধ্য হয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ছুটছেন। হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ায় শীতে মানুষ জবুথবু। কনকনে ঠান্ডায় মানুষের হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।
যশোর শহরের দড়াটানায় কথা হলে রিকশাচালক সিরাজুল ইসলাম ও রফিউদ্দিন জানান, শীতে রিকশা চালাতে গিয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। ব্রেকও ঠিকমতো ধরা যাচ্ছে না। আর বাসাতে মনে হচ্ছে গায়ে সুঁচ ফোটাচ্ছে।
সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের দিনমজুর রজব আলী, সাজিয়ালী গ্রামের গোলাম রসুল জানান, শীতের ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজের জন্য সাইকেল চালানো কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। হাত অবাস হয়ে পড়ে। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। তাদের মতো অনেকেই পেটের দায়ে শীতকে উপেক্ষা করে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে, শীত নিবারণে চাহিদা বেড়েছে গরম কাপড়ের। বেলা ওঠার পর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ক্রয় বিক্রয়। যশোর শহরের দড়াটানায়, মুজিব সড়ক, এইচএমএম আলী সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়ার হকার্স মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট ও জিলা পরিষদ মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ফুটপাত ও ভ্যান গাড়ি থেকেও আয়ের মানুষেরা সোয়েটার, জ্যাকেট , মাফলার , হুডি, গরম মোজা, উলের টুপি কিনছেন।
শীতের প্রকোপের সাথেই বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগ বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ অনেকটা বেড়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।