Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

চৌগাছার পীর বলুহ মেলা চায় না গ্রামবাসী

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই , ২০২৫, ০২:০০:১৬ পিএম

বাবুল আক্তার, চৌগাছা : যশোরের চৌগাছার হাজরাখানা পীর বলুহ দেওয়ান মেলা বন্ধের জন্য পৃথকভাবে আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসী, হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

মেলা চলাকালে মাসব্যাপী গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকা, শিক্ষার্থীদের সড়ক দূর্ঘটনা ও হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা, গ্রামবাসীর বসবাসের পরিবেশ রক্ষা, চাঁদাবাজি বন্ধ, মারামারি (খুন-খারাবি), অশ্লীলতা, মাদক সেবন থেকে যুব সমাজকে রক্ষার জন্য মেলা বন্ধ রাখার দাবি জানানো হয়েছে আবেদনগুলিতে।

হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মিলন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খাদিজা খাতুন গত ৪ সেপ্টেম্বর চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত এক আবেদনে জানান, ‘আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ দেওয়ান মেলার আয়োজন করতে এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ’ হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ও এর আশেপাশের এলাকাজুড়ে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে এই মেলা। এ সময় বিদ্যালয়ের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ মেলার স্টল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্য দ্বারা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির ৩১ আগস্ট সভায় সকল সদস্য বিদ্যালয়ের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ মেলার স্টল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্য দ্বারা যেন ব্যবহৃত না হয় এর পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। মেলা চলাকালীন বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা (যেমনঃ হাত-পা কেটে যাওয়া, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া, বাচ্চা ছেলে-মেয়ে হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি) ঘটতে পারে।’ এতে মাসব্যাপী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম দারুণভাবে বিঘœ হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে মেলা বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মেলা বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মেলায় অশ্লীল নৃত্য, নোংরামি, চাঁদাবাজি, মারামারি বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে একটি গণসাক্ষরকৃত লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন গ্রামবাসী।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাজরাখানা গ্রামে বলু দেওয়ান নামে একটি মাজার আছে। যা প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার ওরশ মাহফিল হয়ে থাকে। বলু দেওয়ানের মাজারে কিছু ভক্ত অনুসরীরা এই ওরশ মাহফিলে অংশ নেয়। ওরশ মাহফিলের পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। বর্তমানে কয়েক বছর যাবৎ মেলায় জুয়া খেলা, পুতুল নাচ, ভ্যারাইটি শো, সার্কাস যাদু খেলার আসরে অশ্লীল নৃত্য, গান-বাজনাসহ মাদকের ব্যবহার এত বেশি পরিমাণে চলে যা আমাদের বাসা-বাড়িতে বসবাসের খুব সমস্যা, পাড়া, মহল্লা ও গ্রামের তরুণ যুব বয়সের ছেলেদের মধ্যে এত বেশি পরিমানে আকর্ষণ সৃষ্টি করে যার কারণে পরবর্তীতে লেখাপড়া ও পিতামাতার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, বিগত বছরগুলোতে ১ থেকে দুই দিন মেলা হতো, বর্তমানে দশ থেকে ১৫ দিন চলার কারণে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া, স্কুল-মাদরাসায় যাওয়া আসার খুব সমস্যা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

এছাড়া হাজারাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখা পড়ার স্বার্থে মেলা বন্ধ রাখার জন্য আবেদন করেন। 

গ্রামের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, গত তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম না হওয়ায় এমনিতেই শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে গেছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন সময়ে মেলার অনুমতি দিলে কমপক্ষে ১০/১৫ দিন বিদ্যালয় ও মাদরাসা বন্ধ রাখতে হবে। এতে প্রতিষ্ঠান দু’টির আট শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য তারা মেলাটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

আবেদন গুলোর প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর তদন্ত করা হয়। এ সময় শুনানিকালে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুজ্জামান মিলন ও প্রধান শিক্ষকসহ অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলা হয়। আবেদনে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা, স্থানীয় গ্রামবাসীর বসবাসের পরিবেশ এবং চাঁদাবাজি, মারামারি, অশ্লীলতা ও মাদক সেবন থেকে যুব সমাজকে রক্ষার জন্য মেলা বন্ধ রাখা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

তিনি বলেন এই প্রতিবেদন গত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি এবং সেটি ডিসি স্যারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলি জানায়, করোনা অতিমারির কারণে গত তিন বছর মেলা বন্ধ থাকলেও চলতি বছর স্থানীয় নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিনকে সভাপতি এবং হাজরাখানা গ্রামের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন সদস্য সচিব করে একটি কমিটি যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এক সপ্তাহের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন। নির্দেশনার আলোকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা চৌগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা (প্রাথমিক) শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের তীরে পীর বলুহ দেওয়ানের দরগাহ ঘিরে দীর্ঘ দিন ধরে হয়ে আসছে ওরস শরীফ ও মেলা। আগে মঙ্গলবার মেলার প্রধান দিন, বুধবার বউবাজার এবং বৃহস্পতিবার হতো ভাঙাবাজার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাজারকে কেন্দ্র করে পূর্বে কপোতাক্ষ নদের তীর থেকে শুরু করে গ্রামের মাঝের হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও তৎসংলগ্ন মাঠগুলিসহ পশ্চিমে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের হাজারাখানা পীর বলুহ দেওয়ান দাখিল মাদরাসা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে বৃহৎ আকারে মেলা শুরু হয়।

 

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)