পাটখড়ি বিক্রি করে সলতার জীবন-জীবিকা

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০১:১৬:১৬ পিএম

শাহীন আলম তুহিন,মাগুরা : অনেক মানুষের জীবনের স্বপ্ন থাকে। তেমনি সলতাও জীবনে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বামীর ঘরে গিয়ে ভালো সংসার করে জীবন সুন্দর করার কিন্তু বিয়ের পর একটানা খাটুনি খাটতে খাটতে এখন সে ক্লান্ত। এখন সলতা আর স্বপ্ন দেখেন না, স্বপ্ন শুধু সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করা। সংসারে ২ মেয়ে ১ ছেলে সলতার। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সলতা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেন। নিজের সামান্য জমিতে ফসল ফলান তার স্বামী। এবার সলতা নিজের ১ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছেন। সেই পাট থেকে পাটকাঠি (পাটখড়ি) বিক্রয় করে চলে তার সংসার। 
শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতি গ্রামে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, এবার পাট কেটে জাগ দিতে আমাদের সময় লেগেছে। কারণ বিলে পানি ছিল না  প্রতি বছর এই ভাটলির বিলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পানি আসে কিন্তু এবার দেরিতে পানি আসার কারণে আমাদের পাট জাগ দিয়ে কাটকাটি সংগ্রহ করতে সময় লাগছে। শুধু তাই অন্য বছর ভাদ্র মাসের শুরুতে আমরা বিল থেকে পাট উঠিয়ে তা থেকে পাটকাঠি সংগ্রহ করে রোদে শুকায়। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত খুবই কম থাকার কারণে পাটকাঠি সংগ্রহ করতে সময় লাগছে। পাট এড়িয়ে পাটকাটি গুলো রোদে শুকাতে ৩-৪দিন সময় লাগে। তারপর আঁটি বেঁধে গোছা করে আমরা বাড়ি নিয়ে যায় । সেখান থেকে পাইকারি ক্রেতা বাড়ি থেকে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যায়। প্রতি আঁটি ১০ টাকা হারে আমরা পাটকাঠি বিক্রি করি। গত বছরের তুলনায় এবার পাটকাঠি চাহিদা রয়েছে অনেক। শুধু গ্রামে নয় শহরের মানুষের কাছেও আমরা পাটকাঠি বিক্রি করি। প্রতি বছর আমি পাটকাটি বিক্রয় করে ৩০-৪০ হাজার আয় করছি। তাতে আমার সংসার ভালো চলছে। 
 ধনেশ্বগাতির অন্য চাষি সমরেন্দ্র বিশ্বাস বলেন,এবার বিলে পানি দেরিতে আসায় আমাদেও পাটকাঠি সংগ্রহ করে বাড়িতে নিতে কষ্ট হচ্ছে । এখন বিলে পানি থাকার কারণে আমরা কাজ করতে পারছি। বিশেষ করে পাটকাঠি রোদে ভালো করে না শুকালে তা বিক্রয় করতে কষ্ট হয়। তাই ভালো ভাবে রোদে শুকাতে আমাদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়। এবার দেরিতে হলেও পাটকাঠিতে ভালো দাম পাবো আশা রাখি। 
মাগুরা সদরের বরই গ্রামে চাষী আকিদুল, টুকু শেখ জানান,আমাদের বরই খালে পাট জাগ দিই। প্রতি বছর এই খাল পাড়ে পাট থেকে পাট কাঠি রোদে শুকিয়ে আটি বেধে বাড়িতে সংগ্রহ করি। তারপর বাড়ি থেকেই ভ্যান যোগে অনেক স্থানে বিক্রয় করি । গত বছরের তুলনায় এবার ভালো পাটকাঠি সংগ্রহ হয়েছে। প্রতি ভ্যাান প্রায় ১শ’ থেকে দেড়শ’ আঁটি পাটকাঠি থাকে। আমরা প্রতি আটি ১০-১৫ টাকা হাওে তা বিক্রয় করি । শুধ্র গ্রামে নয় শহরের অনেকে গ্যাস চলার পাশাপাশি খড়ি সাথে পাটকাটি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে । 
মাগুরা শহরের হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান জানান,আমার বাড়িতে গ্যাস চুলার পাশাপাশি খড়িতে পাটকাঠি ব্যবহার করি। আমার গ্রামের বাড়ি বরই বারাশিয়া। এই গ্রাম থেকে প্রতি বছর আমি পাটকাঠি সংগ্রহ করে তা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে আসছি নিয়মিত।