জার্মানির হোমিও ওষুধ থেকে রোগমুক্তি অনুপ্রেরণা

জার্মান ফুটবল ভক্তের সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা প্রদর্শন

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৫:১৩:৫২ পিএম

শাহীন আলম তুহিন, মাগুরা : ফুটবল বিশ্বকাপ আসলেই বড় বড় পতাকা বানিয়ে তাক লাগিয়ে দেন কৃষক আমজাদ হোসেন। সত্তর বছর বয়সী এই ব্যক্তিটি জার্মানির ফুটবল খেলার ভক্ত। প্রায় দেড় যুগ ধরে তিনি বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে জার্মানির বিশালাকারের পতাকা বানিয়ে আসছেন। 

আর কদিন পরই কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২। আর তাই বরাবরের মতন এবারও দূর দেশ জার্মানির সাড়ে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি পতাকা প্রদর্শন করে মাগুরাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তিনি। 

শুক্রবার সকাল ১০টায় মাগুরা সদরের নিশ্চিতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জার্মানির সাড়ে ৭ কিলোমিটার পতাকা প্রদর্শন করেন কৃষক আমজাদ। তার এই পতাকা প্রদর্শন অনুষ্ঠানে যোগ দেয় চট্টগ্রাম জেলার জার্মানি ফুটবল ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা। পাশাপাশি বহু সংখ্যক বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পতাকা প্রর্দশনে জড়ো হন । 

জানা গেছে, প্রতি বিশ্বকাপেই আমজাদের বানানো পতাকার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। ২০০৬ সালে প্রথমে দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জার্মানির পতাকা তৈরি করেন। এরপর ২০১০ সালে বিশ্বকাপের সময় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পতাকা বানান। ২০১৪ সালে আমজাদ তৈরি করেন ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পতাকা। সর্বশেষ ২০১৮ সালে পতাকার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এবার কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমজাদ হোসেন তৈরি করেছেন সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মানির পতাকা । 

শুক্রবার আমজাদ হোসেনর গ্রামে ঘোড়ামারা গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের শুরু দিকে পতাকা তৈরি করতে গিয়ে পরিবারের কারও সমর্থন ছিল না। তারপর নিজের জমি বিক্রি করে গড়েছিলাম জার্মানির একটি পতাকা। তবে এবার নিজের সন্তানেরাই পতাকা তৈরির খরচ দিয়েছে। এবার নতুন করে দুই কিলোমিটার বাড়িয়ে  আগের পতাকার সাথে যুক্ত করে এবারের পতাকার দৈর্ঘ্য হয়েছে সাড়ে ৭ কিলোমিটার। গত দুই সপ্তাহ ধরে ৪ জন দর্জি মিলে পতাকা সেলাই করেছেন। এবার নতুন দুই কিলোমিটার পতাকা তৈরি করতে ইতিমধ্যে আমার ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে কাপড়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা । পরিবহন ও সেলাই মজুরিতে বাকি টাকা খরচ হয়েছে । 

শুধু পতাকা তৈরি করেই আমজাদের বিশ্বকাপের উন্মাদনা শেষ হয় না। যে দিন জার্মানির খেলা হয় সেদিন বাড়িতে চলে নানা আয়োজন। জার্মানির খেলা দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করেন গ্রামের গ্রামের নানা বয়সী মানুষ। আর দল জিতলেই বেড়ে যায় তার খরচ। 

তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে আমার মা বাদে পরিবারের সবাই পতাকা তৈরির বিপক্ষে ছিল। কিন্তু আমি সেটা শুনিনি। ২০ শতক জমি বিক্রি করে দিলাম। পেলাম ৫ লাখ টাকা। তারপর বাড়িতে প্রজেক্টর কিনে খেলা দেখার আয়োজন করলাম। ২০১৪সালে তৎকালীন জার্মান রাষ্ট্রদূত মাগুরায় এসে জার্মানির পতাকার উদ্বোধন করেন। সে সময় আমাকে জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। একই সাথে জার্মান ফুটবল ফ্যান ক্লাবের অজীবন সদস্য প্রদান করা হয় আমাকে। ২০১৮ সালেও জার্মান দূতাবোসের কর্মকর্তারা এসেছিলেন পতাকা প্রদর্শন অনুষ্ঠানে। তবে এ বছর জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসেনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই নতুন পতাকা প্রদর্শন করা হয় । 

কথা প্রসঙ্গে আমজাদ আরো বলেন, ২০০৫ সালে দিকে আমি কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয় । বিভিন্ন ওষুধ খেয়েও কোনো কাজ হয় না। তখন মাগুরা শহরের মনোরঞ্জন কবিরাজ নামের একজন চিকিৎসকের পরামর্শে জার্মানির তৈরি হোমিও ঔষধ সেবন করে আরোগ্য লাভ করি । এরপর থেকেই আমি জার্মান দলের ভক্ত। জার্মান দলের প্রতি রয়েছে আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই জার্মানির দলের প্রতি ভালোবাসার টানে কিছু একটা করতে ভালো লাগে। তারই আলোকে আমি আমার ভালোবাসার দল জার্মানির পতাকা তৈরি করি। ভবিষ্যতে পতাকার দৈর্ঘ্য আরো বৃদ্ধিও পরিকল্পনা আছে আমার।  এবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হোক জার্মানী এই প্রত্যাশা আমার । 

গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন ,আমজাদ আমাদের গ্রামের ছেলে। সে দারুন ভক্ত ও পাগল জার্মান দলের। জার্মান দলের প্রতি গভীর ভালোবাসার টানেই সে প্রতি বছর তার তৈরিকৃত পতাকার দৈর্ঘ্য বাড়ায়। এবার তার পতাকার দৈর্ঘ্য হয়েছে সাড়ে ৭ কিলোমিটার । 

চট্রগ্রাম থেকে আসা জার্মানী ফুটবল ফ্যান ক্লাবের সদস্য আকতার হোসেন বলেন, আমরা সূদর চট্টগ্রাম থেকে এসেছি আমার প্রিয় দল জার্মানির ভক্ত আমজাদ ভাইকে স্বাগত জানাতে। আমার মনে হয় বাংলাদেশে এত বড় দৈর্ঘ্যের পতাকা আর নেই । 

মাগুরার ক্রীড়া সংগঠক বারিক আনজাম বলেন, আমজাদ ভাই জার্মান দলের দারুণ ভক্ত। জার্মান দলের প্রতি ভালোবাসার টানেই তিনি দীর্ঘ সাড়ে ৭ কিলোমিটার পতাকা তৈরি করেছে । আমরা ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি করি । তাই ফুটবলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা রয়েছে অনেক । আমজাদ ভাইয়ের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই তার এ পতাকা তৈরি করা । আমরা তার সাফল্য কামনা করি । 

মাগুরা চাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন, আমজাদ আমার এলাকার ছেলে। তিনি জার্মান দলের পাগল ও ভক্ত। নিজের জমি বিক্রি করে সে জার্মান দলের পতাকা তৈরি করেছে । যা অনেকেই পক্ষে করা সম্ভব নয়।