কালীগঞ্জে সংঘর্ষে যুবলীগ নেতার মৃত্যু : পৌর কাউন্সিলরসহ আহত ১০

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৩৭:২১ এম

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আরিফুল ইসলাম (৪৮) নামে এক যুবলীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষে পৌর কাউন্সিলরসহ অন্তত ১০ জন আহত ও কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর হয়। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পৌরসভার কাশিপুর বেদে পল্লীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ও জুয়া খেলা কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয়।

দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের হামলায় মৃত্যুবরণকারী আরিফুল ইসলাম কাশিপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম লস্করের ছেলে। তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার বড় ভাই রেজাউল করিম রেজা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। আরিফ গত নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন।

এদিকে, বুধবার বিকেলে স্থানীয়রা খুনিদের আটক ও শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ আটক হয়নি। প্রতিপক্ষের হামলায় মৃত্যুবরণকারীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে কাশিপুর বেদে পল্লীতে আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক পক্ষে মনিরুল ইসলাম ও অপর পক্ষে রাসেল হোসেন নেতৃত্ব দিচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই বেদে পল্লীতে জুয়া খেলা ও এক নারীকে নির্যাতনকে কেন্দ্র করে মনিরুল ইসলাম ও রাসেল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় রাসেলের সমর্থকরা মনিরুলের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। এ খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মেহেদী হাসান সজল ও উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান এবং কালীগঞ্জ থানার এসআই আশিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এক পর্যায়ে রাসেল গ্রুপের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে আবারো সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে পৌর কাউন্সিলর মেহেদী হাসান, বেদে পল্লীর মালা বেগম, পাশ^বর্তী গ্রামের আব্দুল লতিফসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিপক্ষের লোকজন আরিফকে তার নিজের বাড়ির সামনে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। এরপর  স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেয়ার পথে রাত দুইটার দিকে তিনি মারা যান। আরিফ ওই দুই গ্রুপের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন।

বুধবার বিকেলে ৩টার দিকে আরিফের মরদেহ কালীগঞ্জে আসার পর স্থানীয়রা খুনিদের আটক ও শাস্তির দাবিতে আড়পাড়া নতুন বাজার সড়কে মিছিল করেন। মিছিলে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সহধর্মীনি শামিম আরা মান্নœানসহ আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা অংশনেন।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, দীর্ঘদিন ধরে কাশীপুর বেদে পল্লীতে জুয়া ও মাদক ব্যবসা চলছে। এটার নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে ওই বেদে পল্লীর সাপুড়িয়া মনিরুল ও রাসেলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো।  এসব নিয়ন্ত্রণে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে সেখানে মোটিভেশন সভা করেছিলেন। কিন্তু তারপরও সেখানে অপরাধ বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, আরিফ একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন এবং ওয়ার্ড যুবলীগের আগের কমিটির নেতা ছিলেন।

নিহত আরিফের বড় ভাই রেজাউল করিমের অভিযোগ, যুবলীগের একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে হত্যা করেছে।

নিহতের স্ত্রী রেশমা খাতুন জানান, তার স্বামী স্থানীয় দুই পক্ষের বিরোধের শিকার। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। প্রতিপক্ষের লোকজন তার স্বামীকে হত্যা করেছে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, বেদে পল্লীর এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করা নিয়ে রাসেল ও মনিরুলের মধ্যে বিরোধ হয়। সেটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। সেই বিরোধেই নতুন করে এক সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এখনো মামলা বা কেউ আটক হয়নি।