বিনা বেতনে ৩৩ বছর মধুসূদন মিউজিয়াম দেখভাল করছেন শামসুর রহমান

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৮:৫১:০৩ এম

মিলন দে, কেশবপুর (পৌর): দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে বিনা বেতনে মধুসূদন মিউজিয়াম দেখভাল করছেন ষাটোর্ধ শামসুর রহমান। মধুকবির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। পর্যটকরা প্রতিনিয়ত এ মধুসূদন মিউজিয়ামে এসে কবির স্মৃতি বিজড়িত সংগ্রহশালা দেখে মুগ্ধ হন। তবে শামসুর রহমানের অবর্তমানে মধুসূদন মিউজিয়ামের আলো কে জ্বালাবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ।

জানা গেছে, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে ১৯৮৯ সালের ২৬ জানুয়ারি মধুসূদন মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্থানীয় শামসুর রহমান নামে এক মধুপ্রেমী মধুসূদনের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা দেখভাল করেন। এখানে রয়েছে মধুকবির ছবিসহ তাঁর দুই স্ত্রী, কবির বংশধরদের ছবিসহ তথ্য, মধুসূদনের লন্ডনের গের্জিনে ভর্তির আবেদনপত্র ও টাকা জমা দেয়ার রশিদ, ১২০ বছর আগের কবির বাড়ির ছবি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে লেখা কবির চিঠি, তার শিক্ষকদের ছবিসহ তথ্য, কবিকে নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা বই, কবির পড়াশোনা করা হিন্দু কলেজ ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের ছবি, ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীর রুদ্য শাতিয়ে নামে বাড়ি; এ বাড়িতে মধুসূদন দত্ত ১৯৬৩ সালে থাকতেন তার ছবি। এছাড়া রয়েছে স্মৃতিফলক, পুরুলিয়া গীর্জায় মধুসূদনের নামসংক্রান্ত তালিকাসহ অসংখ্য তথ্যে সমৃদ্ধ মধুসূদন মিউজিয়াম।

প্রতিদিন সকালে এসে মধুসূদন মিউজিয়ামের দরজা খোলেন শামসুর রহমান। বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যায়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা একবারের জন্য হলেও স¤পূর্ণ বিনামূল্যে মিউজিয়াম ঘুরে কবিকে নিয়ে তৈরি সংগ্রহশালা দেখে যান। শামসুর রহমানের আন্তরিকতায়ও মুগ্ধ হন পর্যটকরা। এভাবেই প্রতিনিয়ত বিনা পারিশ্রমিকে মধুসূদন মিউজিয়ামে আসা-যাওয়ার মধ্যেই কেটে গেছে শামসুর রহমানের জীবনের সোনালী দিনগুলো। মধুসূদন মিউজিয়ামে আলো জ্বালিয়ে আলোকিত করা এ মানুষটির জীবনের আলো নিভে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের কী হবে এটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তিনি।

সাগরদাঁড়ির মধুসূদন মিউজিয়ামের দায়িত্বরত শামসুর রহমান বলেন, ‘বিনা পারিশ্রমিকে মধুকবির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করে যাচ্ছি। আমার বয়স এখন একষট্টি বছর। আমি যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন পর্যন্ত দেখাশুনা করবো। তবে আমার মৃত্যুর পর এ প্রতিষ্ঠানের কী হবে সেই ভাবনাতে চিন্তিত থাকি। মধুপ্রেমীদের জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মধুসূদন একাডেমির পরিচালক কবি খসরু পারভেজ বলেন, মিউজিয়ামের দায়িত্বরত শামসুর রহমান বিনা বেতনে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করছেন। যা প্রশংসার দাবি রাখে। মাঝেমধ্যে মিউজিয়ামে থাকা আমাদের প্রকাশনার বই বিক্রি হলে সেটা থেকে তিনি সামান্য কিছু সম্মানি পান। মধুসূদন মিউজিয়ামকে এগিয়ে নিতে এখন প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।