রসের চেয়েও পাটালির দাম কম!

এখন সময়: বুধবার, ১৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৪:৪৫:০৪ এম


বিল্লাল হোসেন : মতিয়ার রহমান। বাড়ি খাজুরা বাজার এলাকায়। বুধবার দুপুরে ধামা ভর্তি পাটালি নিয়ে বসে আছেন যশোর শহরের দড়াটানা এলাকায়। প্রতি কেজি পাটালি বিক্রি করছেন ২০০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মাঝে মধ্যে জোর গলায় বলছেন, আসেন খাজুরার খাঁটি পাটালি খান। অথচ চাষিদের ভাষ্যমতে, এটা যেন স্বপ্নের মতো। কেননা গ্রামাঞ্চলে প্রতি ভাড় রস বিক্রি হচ্ছে  ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। অবাক ব্যাপার হলো এক ভাড় রসে গুড় তৈরি হয় আনুমানিক ৮শ’ গ্রাম। আর পাটালি হয় সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’। এছাড়া জ¦ালানি খরচও আছেই। সেই হিসেবে এতো স্বল্প দামে খাঁটি পাটালি বিক্রির হওয়ার বিষয়টি কল্পনা করাও যেন দুরূহ ব্যাপার। তাহলে এতো কম দামে খাঁটি গুড়ের পাটালি বিক্রি করা অবশ্যই ভাববার বিষয়। চাষিরা বলছেন, এটা কখনো খাঁটি গুড়ের পাটালি না। কেননা ভেজাল ছাড়া এতো কম দামে পাটালি বিক্রি করা অসম্ভব।
‘যশোরের জস, খেজুরের রস’ বর্তমানে এই প্রবাদের ঐতিহ্য আর নেই। অথচ গুড় পাটালির জন্যেই বিখ্যাত যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা অঞ্চল। তাই যশোরের খেজুরের রস ও পাটালি গুড়ের সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে দেশ ও বিদেশে। কিন্তু আজ সেই ঐতিহ্য হারিয়ে  গেছে ভেজাল কারবারীদের দাপটের কাছে। ভেজাল ও নকল গুড়ের ভিড়ে এখন এ অঞ্চলে খাঁটি পাটালিগুড় পাওয়া দায়।
কাশিমপুর গ্রামের চাষি রেজাউল ইসলাম জানান, এক কেজি গুড় পাটালি তৈরি করতে প্রায় দুই ভাড় রসের প্রয়োজন। তাই শুধু রসের দাম আসে দুইশ’ টাকার উপরে। এছাড়া দীর্ঘ সময় রস জালিয়ে গুড় তৈরি কঠিন কাজটি করতে জ¦ালানি খরচ রয়েছে। তাহলে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় খাঁটি পাটালি বিক্রি করা যাবে কিনা তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন। হাসতে হাসতে  তিনি বলেন রসের চেয়ে  গুড়ের দাম কম দেখছি।
রেজাউল আরও বলেন, প্রতি কেজি খাঁটি গুড়ের পাটালি দাম পড়বে ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে ৪৫০ টাকা। এতো কম দামে গুড় বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। তবে সময় বুঝে সামান্য দাম কম বেশি হতে পারে।  
যশোর শহরে গুড় পাটালি বিক্রি করতে আসা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে  জানান, খাঁটি গুড় পাটালি বেশি দামে কেউ কিনতে চাইনা। তাই বাধ্য হয়েই ভেজালটা বিক্রি করতে হয়। তিনি অকপটে স্বীকার করেন যতসময় লাভ মনে হবেনা ততসময় তারা গুড়ের সাথে চিনি মেশাতে থাকেন। তবে গুড়ের পরিমান থাকে খুবই কম। তিনি আরও বলেন, ভেজাল পাটালি চেনার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। প্রকৃত খেজুরের গুড়ের খাঁটি পাটালি থেকে মিষ্টি সুগন্ধ ছড়ায়। খুবই নরম হয়। ঘষলেও সাদা রঙ বের হয়না। দেখতে ধুসর বাদামী বর্ণের হয়। কিন্তু ভেজাল গুড় পাটালি শক্ত ও সুগন্ধবিহীন। দেখতে চকচকে ঘষলেই ভিতরে সাদা রঙ চোখে পড়বে। যারা প্রকৃত গুড়-পাটালি কিনতে চান তারা আগে থেকেই গাছিদের বাড়িতে গুড়-পাটালির অর্ডার দিয়ে যান। কেননা বাজারে অধিকাংশ গুড় পাটালিতে রয়েছে ভেজাল। তাই খাঁটি গুড় ক্রেতাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।