‘সত্যিই গাঁজা পাওয়া গিয়েছিল কিনা জানতে চেয়েছে আদালত’

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০৬:১৯:১৭ এম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা শহিদ সিরাজুদ্দীন হোসেন মহাবিদ্যালয়ের সুইপার নিরঞ্জন কুমার ঋষিকে আটক করে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটি জানতে চেয়েছেন যশোরের একটি আদালত। মাদকদ্রব্য না পেলেও আধাকেজি গাঁজাসহ আটক দেখিয়ে নিরঞ্জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এই ধরনের অভিযোগ পেয়ে বিচারক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদপর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৮ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। গত ৯ মার্চ যশোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আহমেদ এই আদেশ প্রদান করেন। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পেশকার তারেক হোসেন।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিরঞ্জন কুমার ঋষি সদর উপজেলার গহেরপুর ঋষিপাড়ার মৃত পুটিরাম ঋষির ছেলে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের এসআই রবিউল ইসলাম তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, একইদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে নিরঞ্জন ঋষিকে গহেরপুর গ্রামের জনৈক মোহাম্মদ আলীর চায়ের দোকানের সামনে থেকে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করেছেন। পরবর্তীতে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

নিরঞ্জন ঋষির আইনজীবী আরিফুল ইসলাম শান্তি আদালতকে জানান, নিরঞ্জন ঋষি নির্দোষ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে তার কর্মস্থল থেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা করেছে পুলিশ। আইনজীবীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আহমেদ খাজুরা শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের কাছে নিরঞ্জন ঋষিকে আটক অবস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঠ প্রস্তুতির জন্য নিরঞ্জন ঋষিসহ কর্মচারীরা সারাদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করেছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে নিরঞ্জন ঋষিকে পুলিশ তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মসজিদের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি লোকমুখে শুনেছেন, পুলিশ তার কাছে গাঁজা থাকার অভিযোগে তাকে আটক করেছে।

অধ্যক্ষের এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেন যে, পুলিশের করা মামলায় নিরঞ্জন ঋষিকে সদর উপজেলার গহেরপুরে মাগুরা সড়কের মোহাম্মদ আলীর চায়ের দোকানের সামনে থেকে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ হাতেনাতে আটকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটি জিআর মামলায় একইদিন দুপুরে নিরঞ্জন ঋষির স্ত্রীকে নিজ বাড়ি থেকে মাদকসহ আটকের দাবি এবং তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

আসামিপক্ষের দাবি, যেহেতু একইদিন বাড়ি থেকে তাদের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের দাবি করা হয়েছে সেহেতু ওইদিন কোনো ব্যক্তি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মাদক বিক্রি করবেন এটা কল্পনাতীত। আসামিপক্ষ আরো দাবি করেছে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নিরঞ্জন ঋষিকে ধরে নিয়ে গিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। আসামি পক্ষের এই অভিযোগ গুরুতর। বিষয়টি সঠিক তদন্ত না হলে ন্যায় বিচার লঙ্ঘিত হবে বলে আদালত মনে করেন। এ কারণে অভিযোগের তদন্ত এবং সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপারকে আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।