সুব্রত কুমার ফৌজদার, ডুমুরিয়া : খুলনার ডুমুরিয়ায় বাড়ির আঙিনায় একটি পুকুরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছেন অনন্যা নামে এক গৃহবধূ। সাড়ে ৩ মাসে ২৫ শতাংশের একটি পুকুরে ২৩ মণ বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। রোববার সকালে উপজেলার কানাইডাঙ্গা এলাকায় তাদের পুকুরে মাছ ধরার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ক্লাস্টারের চাষিরা।
জানা যায়, উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নে কানাইডাঙ্গা গ্রামের অনন্যা বিশ^াস স্বামী অভিজিত বিশ^াসের সহায়তায় বাড়ির আঙিনায় একটি ২৫ শতাংশের পুকুরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে লোনা পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। এপ্রিল মাসের মাঝের দিকে নদী থেকে লোনা পানি উঠিয়ে ভালোভাবে প্রসেসিং করে সেখানে দেশবাংলা হ্যাচারির ২৫ হাজার বাগদার পোনা ছাড়েন।
অনন্যা জানান, আমরা আগে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষ করতাম। এতে লাভ হতো না। তাই গত কয়েক বছর যাবৎ আমরা আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করছি। কোন সময় কি দিতে হবে তা রুটিন অনুযায়ী প্রয়োগ করি। খেয়াল রাখি পানির কোয়ালিটি ঠিক আছে কিনা, বা মাছে খাবার খাচ্ছে কিনা। কোনো ত্রুটি হলে স্বামীকে জানাই। আমরা আর্থিকভাবে এখন অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছি।
স্বামী অভিজিত বিশ^াস জানান, আগে সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতেন। তাতে তেমন লাভ হতো না। উন্নত এ পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করে অল্প জমিতে বেশি লাভ করা সম্ভব হয়েছে। পাশের একজনের এই চাষ পদ্ধতি দেখে ২৫ শতাংশের পুকুরে ২৫ হাজার বাগদা চাষ করা হয়। ১২২ দিনের মাথায় (রোববার, ২০ আগস্ট) মাছ ধরা হয়। ২২ পিচে ১ কেজি হয়েছে। সবমিলে প্রায় ২৩ মণ বাগদা উৎপাদন হয়েছে ওই পুকুরে। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ এবং বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাড়ে ৩ মাসে তাদের ৩লাখ টাকা লাভ হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে অল্প জমিতে অধিক মাছ চাষ করে যে লাভবান হওয়া সম্ভব তা একজন নারী মাছ চাষি অনন্যা দেখিয়ে দিয়েছেন। ডুমুরিয়ায় ২২ জন একক চাষি আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করছেন। উন্নত পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করলে অর্থনীতিতে দেশে একটা বিপ্লব সাধিত হবে। তিনি বলেন, উপজেলায় ১৮ ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট করা হয়েছে। সেখানেও আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে ৭ ক্লাস্টারে প্রায় ২ কোটি টাকা অফেরতযোগ্য অনুদান দিয়েছে সরকার। চিংড়ি খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ এবং কারিগরিভাবে সকল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মৎস্যদপ্তর। চাষি যাতে রোগমুক্ত পোনা পায় সেজন্য এসপিএস হ্যাচারি পোনা পরীক্ষা করে চাষিদেরকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া উন্নত এবং মানসম্মত ভেজালমুক্ত খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে যাতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় সেজন্য নিয়োমিত প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছায় বাগদা চাষ হচ্ছে। কানাইডাঙ্গার অভিজিত বিশ^াসের পুকুরে শতক প্রতি প্রায় ১ মণ বাগদা উৎপাদন হয়েছে। এ ধরণের প্রযুক্তি যদি মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশ লাভবান হবে।