বিল্লাল হোসেন: ‘হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা, আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এই লাইনগুলির মতো কাঁদেননি-যশোর জেনারেল হাসপাতালের সাবেক ২৭ চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারী।
হাসিমুখে তারা লুকিয়েছেন প্রিয় কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ ও বেদনা। বুধবার হাসপাতাল চত্বরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অবসরপ্রাপ্তদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরা অবসরে যাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কয়েক শত চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে ‘স্মৃতির মনিকোঠায়’ শীর্ষক বিদায় অনুষ্ঠান পরিণত হয় মিলন মেলায়।
এদিন হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, ডা. দিলীপ কুমার রায়, বক্ষব্যাধি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সৈয়দ জি জি এ কাদরী, প্যাথলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ, ডেন্টাল সার্জন ডা. কাজী শামীম আহমেদ, সিনিয়র স্টাফ নার্স জয়ন্তী সাহা, নার্সিং সুপারভাইজার সুফিয়া খাতুন, ছায়রা খাতুন, রোখসানা খাতুন, অলোকা সাহা, রোকেয়া খাতুন, অলকা বড়ুয়া, ফিরোজা পারভীন, রেবেকা খাতুন,নাজমা খাতুন, হিসাব রক্ষক মনিরুজ্জামান,অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মোশারেফ হোসেন, মেডিকেল টেকনোলজি (ল্যাব) গোলাম মোস্তফা, কুক মশালচী আব্দুল কাদের, অফিস সহায়ক আব্দুল গফুর, ওয়ার্ড বয় ফিরোজা বেগম, কুক মশালচী দাউদ আলী গাজী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিমাই দাস, সন্তোষ দাস, সালেহা খাতুন, দিলীপ দাস ও রত্না দাসকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুরশিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যশোর জেলা শাখার সভাপতি ডা. এ কে এম কামরুল ইসলাম বেনু।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ বাশার, খুলনা বিভাগের সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আখতারুজ্জামান, যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) যশোর জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা.গোলাম মোর্তুজা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, ডা. দিলীপ কুমার রায়, যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ডা. এনকে আলম, ডক্টরস্ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি ডা. হিমাদ্রী শেখর সরকার, সম্বর্ধনা কমিটির আহবায়ক কার্ডিয়াক বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. তৌহিদুল ইসলাম, উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক ফেরদৌসী বেগম, নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন, ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা নাজমা খাতুন, রোখসানা আক্তার, ৩য় শ্রেণির কর্মচারী মুরাদ হোসেন, মাধবী রায়, মোশাররফ হোসেন, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ, দিলীপ কুমার প্রমুখ।
প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেলেই অনেকে তাদের ভুলে যায়। তারা কর্মস্থলে বেড়াতে আসলে কেউ কেউ না চেনার ভান করে। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। মনে রাখতে হবে তাদের মতো আপনারাও একদিন চাকরি জীবন শেষ করে অবসরে যাবেন। তাই একে অপরকে মনে রাখা শ্রেয়।
তিনি বলেন, অবসরের পর তাদের পেনশন বা অন্যান্য ফাইল নিয়ে যেন দিনের পর দিন অফিসে ঘুরতে না হয়। সহজভাবে তাদের কাজ করে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্বর্ধনা কমিটির সদস্য সচিব আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী, ডা. কানিজ ফাতেমা ও শাহজাহান আলী। আলোচনা শেষে বিদায়ী অতিথিদের সম্মাননা প্রদান ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পুরো অনুষ্ঠানে ছিলো বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেলবন্ধন। ফটোসেশন আর স্মৃতির অ্যালবামে নিজেদের ফ্রেমবন্দি করেন তারা।