চৌগাছায় ৫ কোটি টাকার পেঁয়াজের চারা বিক্রির সম্ভাবনা

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৬:৫১:১৭ এম

বাবুল আক্তার, চৌগাছা: গ্রীষ্মকালীন ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজে লাভবান হওয়ায় এবার শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাাষিরা। ফলে চাহিদা বাড়ায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৫ কোটি টাকার শীতকালীন পেঁয়াজের চারা বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন চারা ব্যবসায়ীরা। কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ হয়েছে।  

চৌগাছা শহরের ইছাপুর গ্রামের চাষি বিপ্লব ও বাবু হোসেন জানান, তারা প্রত্যেকে প্রায় এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। একই জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছেন।

ওই দুই কৃষক আরো জানান, শীতকালীন এই পেঁয়াজের চারা রোপণে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ ওঠা পর্যন্ত আরো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। সব ঠিক থাকলে বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলন হবে বলে আশা করা যায়। যার বাজার মূল্য হবে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। বাজারে বিক্রি করে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে।

চৌগাছা শহরের পেঁয়াজের চারা হাটে আলাপচারিতায় কয়েকজন কৃষক জানান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ভালো ফলন হওয়ায় তারা লাভবান হয়েছেন। যার কারণে চাষিরা অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আরো বেশি জমিতে শীতকালীন পের্ঁয়াজের চারা রোপণ করছেন।

উপজেলার সুকপুকুরিয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি আরিফ হোসেন বলেন, বাজার থেকে বীজ কিনে একবিঘা জমিতে বপন করেছিলাম। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় চারার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার পরেও চারা বিক্রি করে ভালো লাভ হয়েছে। একবিঘা জমিতে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হবে পুরোটাই বাড়তি লাভ। 

বাদেখানপুর গ্রামের রিজাউল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেনে বলেন, এবছরে পেঁয়াজের দাম বেশি পাওয়ায় ধানের পরিবর্তে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন। এ ছাড়া অনেকেই নতুন করে ড্রাগন ও মাল্টার বাগান করেছেন। এসব বাগানের ভেতর পেঁয়াজ চাষ করছেন। এতে অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।

পেঁয়াজের চারা কেনা-বেচার ব্যবসা করেন উপজেলার মনমতপুর গ্রামের মোতালেব ও গিয়াস উদ্দীন। আলাপকালে মোতালেব জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি টাকার চারা বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা লাভ করেছেন।

তার ভাই গিয়াস উদ্দীন জানান, তার ৭ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজতলা ছিল। নিজের চারা বিক্রি করা শেষ। এখন অন্য এলাকা থেকে চারা কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। তিনিও ৫০ লাখেরও বেশি টাকার চারা বিক্রি করেছেন।

চৌগাছা বাজারের পেঁয়াজ চারা বিক্রেতারা জানান, চলতি মৌসুমে ৫ কোটি টাকার চারা বিক্রির সম্ভাবনার রয়েছে। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য  ২৫৫ চাষিকে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়। তাদের প্রত্যেককে এক কেজি করে নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার ও নগদ অর্থসহ অন্য সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে। 

সূত্রমতে, ৮০ হেক্টর জমিতে উপজেলায় শীতকালীন পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে । এ পর্যন্ত ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করে চাষিরা। কিন্তু চাষি ও চারা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আরো বেশি জমিতে চাষাবাদ চলছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, চৌগাছার মাটি পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করায় তারা এখন বাণিজ্যিক ভাবে পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন। এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।