বিল্লাল হোসেন: যশোরে ‘মারণাস্ত্র’ হিসেবে ছুরি ব্যবহার করছে দুবৃর্ত্তরা। প্রাণঘাতি হামলায় অস্ত্রটির ব্যবহার হচ্ছে অবাধে। ফলে ছুরি-চাকুর ফলায় যেন মৃত্যু ঘুরছে। গত ১ সপ্তাহে ছুরিকাঘাতে ৩ জন খুন হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ৬ জন। বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাতে বেপরোয়া উঠতি বয়সি ও কিশোর গ্যাং সচরাচর ছুরি-চাকুর ব্যবহার করছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ছুরিকাঘাতে নিহতরা হলো, যশোর শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক মোড়ের আব্দুল হকের ছেলে সোলাইমান হক (৩০), সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ছোট শেখহাটি এলাকার রফিকুল ইসলাম মনুর ছেলে রিপন হোসেন দিপু (২৮) ও ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের শাহাদত মোল্লার ছেলে তৌফিক আহমেদ (২৫)। এই সময়ের মধ্যে ছুরিকাহত হয়ে ৬ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকায় আত্মীয় জসিম উদ্দিনকে রক্ষা করতে গিয়ে খুন হন সোলাইমান। উঠতি বয়সের সন্ত্রাসীরা তাকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে খুন করে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত একজনকে সন্দেহে আটক করলেও মূল খুনিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এর আগে ২০ জানুয়ারি কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আলাদা ঘটনায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন রিপন হোসেন দিপু ও তৌফিক আহমেদ। সদর উপজেলার ছোট শেখহাটি গ্রামের দিপু একজন মাংস বিক্রেতা ছিলেন। ব্যবসায়ের অংশীদার একই এলাকার ইমরান, আসাদুল ও তপুর সাথে পাওনা টাকা নিয়ে তার দ্বন্দ্ব হয়। এরই জের ধরে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে দিপুর বাড়িতে হামলা চালায়।
দিপুকে বাড়ির পাশে ধরে নিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের পর ফেলে রেখে যায়। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছে নিহতের পরিবার।
একই দিন (২০ জানুয়ারি) সকালে সাড়ে ৯ টার দিকে ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল এলাকায় তৌফিককে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে খুন করে বন্ধু বাবু মোড়ল ওরফে ক্যাসেট বাবু। স্ত্রীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখার জের ধরে তাকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।
এই ঘটনায় নিহতের পিতা কৃষ্ণনগর গ্রামের শাহাদাৎ মোল্যা ছেলেকে খুনের অভিযোগে ক্যাসেট বাবু ও তার স্ত্রী রিয়াকে আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তভার গ্রহণের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ক্যাসেটকে বাবুকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছে। তার স্ত্রী রিয়া এখনো পলাতক।
যশোর জনারেল হাসপাতালের রেজিস্টার খাতার তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ দিনে ছুরিকাহত ৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা হলেন, যশোর শহরের বেজপাড়ার নজরুল শিকদারের ছেলে জসিম শিকদার (২৭), ষষ্টিতলা পাড়ার মৃত নুরুল ইসলাম তোতার ছেলে তাসনিম রাহাত ওরফে সাদ (৩২) ও তার ভাগ্নে একই এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে আরাফাত ইসলাম সানি (১৭), সদর উপজেলার ইউনিয়নের হাসলা গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে কামারুল ইসলাম (৩২), ইছালী ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের মৃত মাওলা দফাদারের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫৫) ও বাঘারপাড়া উপজেলার রাঘবপুর গ্রামের কলিম সরদারের ছেলে রমজান আলী (২২)।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) জুয়েল ইমরান জানান, বিচ্ছিন্নভাবে এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছুরির অবাধ ব্যবহার ঠেকাতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে। কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের প্রায়ই আটক করা হচ্ছে।