❒তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকারী গ্রেফতার যশোর ডিবির

সুদের টাকার জন্য লাথি দেয়ায় মহাসিনকে হত্যা করে লিখন, স্বীকারোক্তি

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৬:২৬:০৪ এম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ৯ মাসে দুই লাখ টাকায় ৭ লাখ টাকা সুদ বাকি পড়ায় গালিগালাজ ও লাথি দিয়েছিলেন মহাসিন মন্ডল (৪৭)। আর সেই রাগে অফিসের মধ্যে ল্যাপটপের ক্যাবল (তার) গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করেন মেহেদী হাসান লিখন (৩২)। এরপর মরদেহ ট্যাংকির মধ্যে ভরে গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি পুলিশ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার এবং হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে নিহতের মোবাইল ফোন, একটি ট্যাংকি ও জুতা।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেহেদী হাসান লিখন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহমেদ ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। 

আটক লিখন নড়াইল সদর উপজেলার উজিরপুর গ্রামের মৃত আকবর হোসাইনের ছেলে। বর্তমানে সদর উপজেলার নুরপুর মধ্যপাড়া গোলদার পট্টি এলাকায় বসবাস করেন। তিনি ঈগল হাইফোর্স অ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড নামে এক সিকিউরিটি কোম্পানির পরিচালক। সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ছিলেন তিনি।  যশোর ডিবি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর লিখন হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

মহাসিন মন্ডল নিহতের ঘটনায় তার ভাই কোরবান মন্ডল কোতয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তার ভাই কৃষি কাজ করতেন। ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পৌনে ৫টার দিকে একজন ব্যক্তির মোবাইল ফোন পেয়ে তার ভাই বাড়ি থেকে বের হন। এরপর বাড়িতে ফেরেনি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার ভাইকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে না পেয়ে পরদিন কোতয়ালি থানায় একটি জিডি করতে যান। থানায় গিয়ে জানতে পারেন সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা জামে মসজিদের পশ্চিম পাশে বাঁওড়ের কোনায় একজনের লাশ পাওয়া গেছে। সেখানে গিয়ে তার ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পান। তার মুখমন্ডল পেট্রোল দিয়ে পেড়ানো অবস্থায় দেখেন। গলায় তার দিয়ে ফাঁস দেয়া। দুই হাত বাঁধা এবং মরদেহ উলঙ্গ ছিল। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ময়না তদন্ত হওয়ার পর লাশ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দাফন করা হয়।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, তার ভাইয়ের সাথে অনেকের আর্থিক লেনদেন ছিল। সে কারণে কেউ হয়তো তাকে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করতে পারে। তার প্রতিবেশী মেহেদী হাসান লিখনের সাথে আর্থিক লেনদেন ছিল। সেই এই হত্যার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।

ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেহেদী হাসান লিখনকে তার বাড়ি থেকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হত্যার কথা স্বীকার করে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। লিখন সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ৪ থেকে ৬ বছর চাকরির পর পালিয়ে আসেন এবং একটি কোম্পানি খুলে ব্যবসা শুরু করেন। টাকার প্রয়োজন হলে তিনি নিহত মহাসিনের কাছ থেকে সপ্তাহে ৩ হাজার টাকার সুদের বিনিময়ে ২ লাখ টাকা নেন। ওই টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে ৯ মাসে ৭ লাখ টাকা দাঁড়ায়। ওই টাকা পরিশোধের জন্য লিখনকে চাপ দেন মহাসিন। লিখনের এক জায়গা থেকে একটি চেক পাওয়ার কথা ছিল ৮ ফেব্রুয়ারি। তিনি মোবাইলে ফোন করে মহাসিনকে বাড়িতে ডেকে নেন।

তিনি আরো জানান, চেকটি লিখন ওই দিন বিকেল ৫টার পর পাওয়ায় ক্যাশ করতে পারেননি। ফলে টাকা না পেয়ে মহাসিন গালিগালাজ করে এবং লিখনকে লাথি মারে। এতে লিখন ক্ষিপ্ত হন। তার মাথায় খুন চেপে যায়। তিনি ল্যাপটপের কেবল দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ধরলে মহাসিন নিস্তেজ হয়ে পড়লে ঘর থেকে বের হয়ে নূরপুর বাজারে যান। কিছু সময় পর ফের ঘরে ফিরে দেখেন মহাসিনের কোনো হুশ নেই। মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে লিখন স্টিলের ট্যাংকের ভেতরে লাশ ঢুকিয়ে একটি অটোতে করে শহরের আরএর রোডে নিয়ে যান। অটোচালককে নুরপুর যেতে বললে রাজি না হওয়ায় একটি ভ্যানে করে ফতেপুরে নিয়ে যান। সেখানে ভ্যান থেকে ট্যাংকি নামিয়ে লাশ টানতে টানতে বাঁওড় পাড়ে নেন। সেখান ফেলে দিয়ে লিখন ফিরে আসেন। ফের একটি পেট্রোল পাম্প থেকে একশ টাকা ডিজেল কিনে একাই সেখানে যান। মুখে ও শরীরের ডিজেল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে লিখন বাড়ি এসে শুয়ে পড়েন। বাদীর অভিযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে লিখনকে আটক করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খানর মাইদুল ইসলাম রাজিব জানিয়েছেন, ঘটনার পর তিনি লিখনকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। সে সময় এলাকার লোকজন বিষয়টি জানতে পারে এবং তার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। পরে ঘটনাস্থল ফতেপুর বালিয়াডাঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পালবাড়ি থেকে ট্যাংকটি উদ্ধার করেন এসআই রাজিব।