যশোরে শেখ হাসিনা আইটি পার্কে মতবিনিময়

‘দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে উদ্যোক্তারা’

এখন সময়: শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৩:১২:০৯ পিএম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় পার্কটির বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ এবং হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিনিয়োগকারীরা। শনিবার দুপুরে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের কাছে পার্কটিতে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন তারা। 

বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, এটি দেশের প্রথম আইটি পার্ক। ফলে সবকিছুতেই মডেল হতে পারতো পার্কটি। কিন্তু সরকার এটিতে সেভাবে মনোযোগ দেয়নি। দেশের প্রথম আইটি পার্কের লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হওয়াতে নতুন করে এই সেক্টরে বিমুখ হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তারা।

পার্কের বর্তমান তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে তিনি বলেন, পার্কটিতে লক্ষ্য অনুযায়ী কর্মসংস্থান হয়নি। বিনিয়োগের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী ই-কমার্স, কল সেন্টার, ইন্টারনেট সেবা ও ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে। সফটওয়্যার টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নগণ্য। পার্কটিতে জায়গা বরাদ্দ নেয়া ৬১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪ টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে অপারেশনে রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় ৩১টি। বাকি ১৩টি ঢাকার প্রতিষ্ঠান। বিদেশি প্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা চলে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথমদিকে চুক্তিবদ্ধ ৩৩টির মধ্যে ১৪টি কোম্পানি পুরোনো। বাকিগুলো সব নতুন। পার্কটির প্রধান সমস্যা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল। যশোরের বাস্তবতায় এই ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি। 

মহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, সরকারের উন্নয়নের চিত্রে এই পার্কটি দেখানো হয়। অথচ পার্কটি সরকারের একটি নান্দনিক বিন্ডিং ছাড়া এখানে আর কিছুই নাই। নানা সংকট বিদ্যমান। পণ্য বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্টদের কোনো ধরণের উদ্যোগ নেই।

বিনিয়োগকারী পারভেজ মাহমুদ হিরা বলেন, স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য এই পার্ক নির্মাণ হয়েছিল। পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাবে কোম্পানি শূন্য হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে উদ্যোক্তারা এখানে এসেছিল। কাজ করতে না পেরে স্থানীয় উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুতই উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাই।

সংগঠনের সভাপতি আহসান কবীর বলেন, পার্কটিতে আইকনিক ভবন রয়েছে। কিন্তু কার্যক্রম বিকশিত হচ্ছে না। ভালো ভালো উদ্যোক্তা থাকলেও নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতায় আটকে যাচ্ছেন। তার পরেও এখানকার উদ্যোক্তারা হাল ছাড়ছেন না। এসব উদ্যোক্তারা শেখ হাসিনার নামে এই পার্কটি যে উদ্দেশ্য নির্মিত হয়েছিল সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন। করোনাকালীন এখানকার বিনিয়োগকারীদের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করার দাবি জানাই।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সরকার অনেক কিছুই ধরে ধরে পরিবর্তন করছে। তারই অংশ হিসেবে যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নানান ভাবে অর্থবহ করা হবে। ডিজিটালে দেশকে এগিয়ে নিতে দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ককে আরো কর্মমুখী করতে সকল প্রকার উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করবে।

সংগঠনের সভাপতি আহসান কবীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) ব্যারিস্টার গোলাম সরওয়ার ভূইয়া, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদ ও যশোর পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ইমানুর রহমান ইমন, অজয় দত্ত, আরিফুল হাসনাত, উজ্জ্বল বিশ^াস, আনিকা হাসান প্রমুখ।

মতবিনিময় সভা শেষে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস এসোসিয়েশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, দি বাংলাদেশ ইকো সিস্টেমের রি-ব্রান্ডিং ও বর্ণ আইটির জনসচেতনতায় ডিজিটাল কনটেন্ট শীর্ষক একটি ইউটিউব চ্যানেল “ডিজিটাল টেক” কেক কেটে উদ্বোধন করেন কাজী নাবিল আহমেদ।

একই সাথে তিনি টেকনোসফট গ্লোবাল লিমিটেডের ই-সমবায় সফটওয়্যার উদ্বোধন এবং এ্যাবাকাস সফট বিডি লিমিটেডের অফিস পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুল কবীর বিজু প্রমুখ।