বিল্লাল হোসেন: যশোর শহরে নির্মাণাধীন ৭ তলা ভবনের ৬ তলার সানসেট ভেঙে নিচে পড়ে দুই প্রকৌশলীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সার্কিট হাউজপাড়ায় ‘ইকবাল মঞ্জিলে’ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার ছোট লক্ষীকুল কয়া এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিনের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান (৩৫), দিনাজপুর নিউটাউন এলাকার কাজী হাসান আলীর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার কাজী আজিজুর রহমান (৩৪) ও রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহারাজপুর গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে শ্রমিক নুরুল রাজ (৩২)। স্থানীয়রা বলছেন, বহুতল ভবনে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও প্রয়োজন মত রড ব্যবহার না করায় মুহূর্তে তিনটি প্রাণ ঝরে গেল। বিল্ডার্স কোম্পানিগুলো কি অন্য বহুতল ভবন নির্মাণেও এমন শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়। নির্মাণ কাজ চলাকালীন তদন্ত করা প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দা খোকন হোসেন, রিজিয়া বেগম ও শ্রমিক রমজান আলী জানান- শহরের খড়কি সার্কিট হাউজপাড়ায় ‘বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেডের’ অধিনে ‘ইকবাল মঞ্জিল’ নামে ৭ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। ঘটনার সময় ৬ তলার বারান্দার সানসেটের পাশে ওয়ালে গাঁথুনির কাজ চলছিল। তখন হঠাৎ সানসেট ভেঙে নিচে পাকা সড়কের ওপর পড়লে ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর, আজিজুর ও শ্রমিক নুরুল রাজ আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক সাকিরুল ইসলাম জানান, ওই তিনজনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনার পর মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়। নিহতদের মাথা বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখমের চিহ্ন ছিল।
নির্মাণাধীন ভবনের কয়েকজন শ্রমিক জানান, ঘটনার সময় ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান ও আজিজুর রহমান নির্মাণধীন ভবনের কাজ তদারকির করছিলেন। সানসেটের পাশে ওয়াল গাঁথুনির কাজ দেখভাল করার সময় হঠাৎ সানসেট ভেঙে পড়ে। এতে সানসেটের ওপর থাকা তিনজন প্রাণ হারান।
নিহত আজিজুর রহমানের স্ত্রী ইশরাত জাহান জানান, দুর্ঘটনা কিছু সময় আগেও তার স্বামীর সাথে কথা বলেছেন। হঠাৎ করে তার মৃত্যুর খবর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত। তার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। স্বামী হারানোতে স্ত্রী বড় ধাক্কায় হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ইশরাত। বলছিলেন, এভাবে আমাকে একা করে কেনো চলে গেলে। সারাাকে (মেয়ে) বুকে জড়িয়ে আদর করবে কে।
হাসপাতাল মর্গে দায়িত্বরত কোতোয়ালি মডেল থানার এস আই পায়েল জানান, নির্মাণাধীন ভবনের সানসেট ভেঙে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে ত্রুটি থাকার কারণে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বিল্ডার্স কোম্পানিগুলোর বহুতল ভবণ নির্মাণের সময় শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রয়োজন। আইনী প্রক্রিয়া মেনে স্বজনদের কাছে তিনজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
যশোর শহরের সার্কিট হাউজ পাড়ার বাসিন্দা ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ জানান, ইকবাল মঞ্জিলটির বহুতল ভবনের একপাশ নির্মাণ শেষ হলেও অন্যপাশে নির্মাণাধীন ছিল। নির্মাণাধীন অংশের সানসেট ভেঙে নিচে পড়ে তিনজন মারা গেছেন। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।
তমাল আহমেদের অভিযোগ, ভবনটি ত্রুটিপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হচ্ছিল। ভবনের গঠনশৈলী ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে বিল্ডিংটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থায়ও ঘাটতি ছিল। এই সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছিলেন।
স্থানীয় অনেকেই জানান, ভবন নির্মাণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় বড় ধরণের একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বিল্ডার্স কোম্পানির তৈরি করা বহুতল ভবনগুলো এমন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্যবহার করা হয়। কোম্পানি বেশি লাভের আশায় কি এভাবে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত বিল্ডার্স কোম্পানির যে কোন বহুতল ভবন নির্মাণের সময় কঠোরভাবে তদারকি করা। তাহলে ভবন নির্মাণে তারা ফাঁকি দিতে সাহস হারাবেন। অন্যথায় বহুতল ভবন নির্মাণ আগামীতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এই বিষয়ে ‘বিল্ডিং ফর ফিউচার লিমিটেডের’ ম্যানেজার বাবলু রহমান জানান, ২০১০ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আকস্মিক দুর্ঘটনায় কোম্পানির দুই জন প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেনো এমন দুর্ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন, নির্মাণাধীন ৭ তলা ভবনে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ভবনের সানসেট ভেঙে দুই ইঞ্জিনিয়ারসহ তিন জন নিহতের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।