নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছে শনিবার। এদিন সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রেনটি সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে রূপদিয়া রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়। স্টেশনটিতে প্রায় ১০ মিনিট অবস্থানের পর আবার ভাঙ্গার দিকে রওনা হয়।
একইভাবে বেলা ১২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি ট্রেন ভাঙ্গা-যশোর রুটে যাত্রা করে। যশোর ঘুরে ফের ভাঙ্গায় ফিরে যায় ট্রেনটি। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ভাঙ্গা-যশোরে প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হয়। একই রুটে রোববারও পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। এর ফলে যশোরাঞ্চলের মানুষের আরো একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চললো।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্প শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন।
মাঠ পর্যায়ে ২০১৯ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল । ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটির অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী ও যশোরের পদ্মবিলা এবং সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন রয়েছে।
এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে শনিবার ও রোববার দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ কাজের অবস্থা পরীক্ষা করা হবে।
পরীক্ষামূলক ট্রেনের চালক আব্দুল মান্নান বলেন, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে আসি। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছেছি। ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দিয়েছি। পথে কোথাও কোনও সমস্যার সম্মুখীন হইনি।
ভাঙ্গা যশোর অংশের ট্র্যাক ইনচার্জ আনোয়ারুল কবির জানান, নতুন এ ট্র্যাক করা হয়েছে চীনা প্রযুক্তিতে। ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিটের স্লিপার। এটি টেকসই যেমন, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক কম হবে।
আরেক ট্র্যাক ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাফওয়ান হোসাইন রাতুল বলেন, পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক নতুন এ রেল লাইন দেশের রেল নেটওয়ার্ককে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, আগামী জুন বা জুলাইয়ে মধ্যেই নতুন রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তদারকিতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রডগেজ এ নতুন রেললাইন স্থাপন করে। পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাদের দাবি এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া নতুন রুট চালু হলে কম সময়ে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও মালামাল পরিবহন সহজ হবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পাবে নতুন গতি।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল খান বলেন, পদ্মাসেতুর রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিপ্লব ঘটলো। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমেছে। সহজেই যাতায়াত করতে পারবো।
আরেক বাসিন্দা আলমগীর কবির বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে রেল যোগাযোগের মাইল ফলক তৈরি হলো। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। রেল যোগাযোগের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলে যাবে।
যশোর রেলস্টেশনের মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, এই ট্রেন যশোরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদের উপহার। পণ্যবাহী (পাথর) ট্রেনটি ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে যশোরে আসে। যাওয়ার সময় আরও বেশি বেগে গিয়েছে।
তিনি বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেনের গতি ১০০-১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরীক্ষা করা হবে। দুইদিনের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের পর আগামী জুন মাস নাগাদ এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ শেষে চলছে ট্রায়াল রান। এরপর পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রুটে সোজা পথে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে। নতুন এ রেলপথ চালু হলে যশোর থেকে দূরত্ব কমবে অন্তত ১৯৩ কিলোমিটার। যুক্ত হতে পারবে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কে।’