স্পন্দন ডেস্ক : মৃত্যুদণ্ডাদেশ ‘চূড়ান্ত হওয়ার আগে’ কোনো আসামিকে কারাগারে ‘কনডেম সেলে’ রাখা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে হাই কোর্ট।
আদালত বলেছে, কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড আপিল বিভাগ এবং রিভিউয়ের পরও বহাল থাকলে এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদনও নাকচ হয়ে গেলে তখনই তার ‘মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত’ হয়েছে বলে ধরতে হবে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ ‘চূড়ান্ত হওয়ার আগেই’ যাদের কনডেম সেল বা কারাগারে নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে, তাদের পর্যায়ক্রমে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষকে। আর এ কাজের জন্য দুই বছর সময় বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট।
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, কোনো দণ্ডিত আসামি যদি তেমন কোনো সংক্রামক ব্যধিতে আক্রান্ত হন যে তাকে অন্যদের সাথে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ, তখন তাকে কনডেম সেলে রাখা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে আদালত। তবে এক্ষেত্রেও দণ্ডিতের বক্তব্য শোনার শর্ত দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি তিন কয়েদির রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের বেঞ্চ সোমবার এই রায় দিল।
রিটকারীদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
কনডেম সেলে থাকা তিন আসামিকে নিয়ে ২০২১ সালের ১৮ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর এ রিট আবেদন করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
ওই তিন কয়েদি হলেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির এবং কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, “মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাই কোর্ট। একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
“সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হল।“
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দণ্ডবিধিতে কনডেম সেলে রাখাই এক ধরনের শাস্তি। কাজেই মৃত্যুদণ্ডের রায়ে পর কনডেম সেলে রাখা হলে তা দুইবার সাজার সমতুল্য।
রায়ের নির্দেশনায় আদালত বলেছে, সরকার কারাবিধি সংস্কারের যে কাজ করছে, সেখানে যেন এই রায় ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন থাকে।
যদি কেউ তথ্য অধিকার আইনে কারাবন্দি সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে চায়, তাহলে সে তথ্য দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয় রায়ে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জামিন আবেদন নিয়েও আদালত নির্দেশনা দিয়েছে।
বর্তমান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জামিন আবেদন যে হাই কোর্টে গ্রহণ করা হয় না, সে কথা তুলে ধরে আদালত আপিল চলমান থাকা অবস্থায় তাদেরও অন্য আসামিদের (যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়নি) মত জামিন আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
‘মৃত্যুদণ্ডের আসামি’ কখন বলা যাবে, সেই সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে ভারতের আদালতের ‘সুনীল বাত্রা বনাম দিল্লি প্রশাসন (১৯৮০)‘ মামলা প্রাসঙ্গিক বলে রায়ের পর্বেক্ষণে উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, “কখন একজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি করা হবে? বিচারিক আদালত সাজা ঘোষণার পর নাকি রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করার পর? ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই মামলার রায়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করার পর দণ্ডিত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলা হবে।
“অর্থাৎ সব ধরনের আইনগত অধিকার সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে এবং তাকে কনডেম সেলে রাখা যাবে।“