যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদে পদে দুর্ভোগ-হয়রানি

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৯:৫৪:৪৯ এম

 

বিল্লাল হোসেন: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের পদে পদে দুর্ভোগ ও হয়রানি পোহাতে হচ্ছে।  টিকিট কাউন্টার, চিকিৎসকের কক্ষ, ক্যাশ কাউন্টার ও প্যাথলজি বিভাগসহ সবখানে দুর্ভোগ। সঠিক সময়ে বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় চিকিৎসক না দেখিয়ে রোগীকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়। ফের পরের দিন আবারো হাসাপাতালে আসতে হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের বাড়তি চাপের কারণে এমন পরিস্থিতি।

রোগীদের ভাষ্যমতে, বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে টিকিট কাউন্টারে। অথচ মাত্র দুটি কাউন্টার থেকে টিকিট বিতরণ করা হয়। যে কারণে টিকিট পেতে রোগীদের ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। টিকিট নিয়ে চিকিৎসকের কক্ষের সামনে গিয়েও দুর্ভোগের মুখে পড়েন রোগীরা। শত শত রোগী সিরিয়ালে থাকলেও দেখা যায় চেম্বারে চিকিৎসক নেই। নাস্তার জন্য বের হয়ে আধা ঘণ্টায়ও চেম্বারে ফেরেন না চিকিৎসক। আবার চেম্বারে থাকলেও রোগীর চিকিৎসা প্রদানে রয়েছে গাফিলতি। যে কারণে দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে রোগীদের দুর্ভোগের কবলে পড়তে হচ্ছে।

রোগীরা আর ও জানান, চিকিৎসক যদি ব্যবস্থাপত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষার নির্দেশনা দেন তাহলে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দিতে গিয়ে রোগীদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এখানে দুটি কাউন্টারে টাকা জমা নেয়ার কারণে এখানেও রয়েছে রোগীদের দুর্ভোগ-হয়রানি। বেলা ১২ টার পর ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা নেয়া হয়না। যে কারণে অনেকেই পরীক্ষা নিরীক্ষার টাকা দিতে ব্যর্থ হন। এজন্য রোগীদের অপেক্ষা করতে হয় পরের দিন পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে শারমিন, রোকেয়া ও রহিদুল ইসলাম জানান, জানান,  ক্যাশ কাউন্টার মাত্র দুটি। তারপরেও আবার টাকা জমার সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়ায় অনেকেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারছেন না। এজন্য পরের দিন ফের হাসপাতালে আসতে হয়। নির্ধারিত সময়ে টাকা জমা দিতে পারা রোগীরাও সংশ্লিষ্ট বিভাগে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে পড়ছেন দুর্ভোগ ও হয়রানির কবলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  প্যাথলজি বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইন থাকে। ফলে প্যাথলজি বিভাগ থেকে অনেক রোগীর পরীক্ষার রিপোর্ট পরের দিন দেয়া হয়।  তাই তারা চিকিৎসাসেবা না নিয়ে বাড়িতে চলে যান। চিকিৎসাসেবা নিতে পরের দিন হাসপাতালে আসেন। এমন দুর্ভোগের শিকার রোগী পারভীন আক্তার ও সাদেক আলী গাজী জানিয়েছেন, হাসপাতালে এসে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা পেতে তাদের সময় লেগেছে মোট তিনদিন। এর ব্যাখ্যা হলো প্রথম দিন টিকিট কাটা ও ডাক্তার দেখাতে তাদের দুপুর সাড়ে ১২ টা পার হয়ে যায়। ফলে সেদিন আর ক্যাশ কাউন্টারে প্যাথলজি রিপোর্ট করার জন্য টাকা জমা দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দিন এসে টাকা জমা দিয়ে পরীক্ষার জন্য রক্ত ও প্রস্রাব জমা দিয়ে সেদিন আর রিপোর্ট পাননি। তৃতীয় দিন সকালে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখান তারা।

জানা গেছে, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্টরা রক্ত ও প্রসাব সংগ্রহ করতে আসেন দেরি করে। অনকে সময় স্বজনরা তাগিদ দিলে বলা হয় রোগীকে এখানে আনেন। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ ইচ্ছামতো দায়িত্ব পালন করার কারণে তারা রিপোর্ট হাতে পান পরের দিন বেলা ১টার পর। রোগীদের অভিযোগ, সরকারি এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে ওয়ার্ডে দায়িত্বরতরা নানা অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেন। ওয়ার্ডে পৌঁছে দিয়ে টাকা, ক্যাথেটার লাগাতে গেলে টাকা, খুলতে গেলে টাকা, ড্রেসিংয়ের জন্য টাকা, শয্যা পেতে গেলে টাকা।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। এ ছাড়া বহিঃবিভাগে বর্হিঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি। রোগীর তুলনায় জায়গাও সংকট। ফলে রোগীরা কিছুটা দুর্ভোগের শিকার হন। তবুও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।