মাগুরা প্রতিনিধি : ‘আমার একমাত্র সন্তানকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে ফুটবল খেলার মাঠ থেকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি কি করতে পারি আমার সন্তানের জন্য। যেখানে রাষ্ট্রই এই মেধাবী সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। মেধাবী ছাত্রদের এভাবে মিথ্যা মামলায় জেলখানায় ঢোকালে তাদের ভবিষ্যৎটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। বিচারের জন্য কোথাও যাব না। সন্তানের যা হয় হবে’। এ কথাগুলি বলেছেন কারাগারে থাকা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাঈমুর রহমান মুন্না (২১)এর বাবা রবিউল ইসলাম। যিনি দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় থেকে গত কয়েক মাস আগে দেশে ফিরেছেন।
তিনি আরো বলেন, ১৮ জুলাই পুলিশের সাথে গণ্ডগোল হয় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সাথে। আমার সন্তান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে মাগুরায় আসে ২৬ জুলাই। এতো বড় মিথ্যাচার করে আমার সন্তানকে এভাবে মামলায় ফাঁসানো সঠিক হয়নি।
গত মঙ্গলবার ৩০ জুলাই বিকেলে শহরের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। মুন্নার সাথে আরও তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। আটক শিক্ষার্থীরা হলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সিফাতুর রহমান (২১) ও ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার সানি (২১)। তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের সবার বাড়ি মাগুরার শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তাদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সিয়াম বিন আইয়ুব (২২) নামে আরো এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হলেও বুধবার রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার অভিযানের বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীরা মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের দেয়ালে সরকার বিরোধী স্লোগান লেখা শেষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের মধ্যে তারা জড়ো হয়েছিল। এ কারণে তাদের আটক করা হয়।
এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ওসি মেহেদি রাসেল বলেন, ১৮ জুলাই ভায়না এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় একজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সিফাতুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান বলেন, পুলিশ বিভিন্ন কথা বলছে। যেটা আমাদের জন্য কাম্য নয়। পুলিশ বলছে, তারা দেয়াল লিখনের সাথে জড়িত। তাহলে আলামত হিসাবে আমাদের সন্তানদের হাতে শরীরে কোথাও না কোথাও রঙের চিহ্ন থাকার কথা। সেটা তো নেই।
শাহারিয়ার সানির বাবা জিল্লুর রহমান বলেন, আমার সন্তানকে বলা হচ্ছে সে জামাত-শিবির করে। অথচ আমার বাবা একজন ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার নাতি হিসেবেও তার (শাহরিয়ার সানির) সনদপত্র রয়েছে। তাহলে বলেন ,এদেশে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার কারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি ভবনের দেয়ালে কোটা সংস্কার ইস্যুতে সরকারের চলমান অভিযানের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন রয়েছে। তবে এগুলো কারা এঁকেছেন সে বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছুই জানেন না বলে নিশ্চিত করেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই মাগুরা যশোর মহাসড়কে মৎস্যভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় ওই দিন দিবাগত রাত বারোটার পর মাগুরা সদর থানায় উপ পরিদর্শক এস আই শিমুল হালদার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেখানে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলায় এর আগে থেকে ৬ শিক্ষার্থীসহ ২৫ জন কারাগারে রয়েছেন।