বিল্লাল হোসেন : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বেপরোয়া ১৩ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয় থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞাটি দেয়া হয়। ছাত্রলীগ ক্যাডার নামধারী এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী ও সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ১৩ জনের মধ্যে আগেই ৯ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছিলো।
ক্যাম্পাসে নিষেধাজ্ঞা জারি করা শিক্ষার্থীরা হলেন পিইএসএস বিভাগের সোহেল রানা, রেদওয়ান আহম্মেদ (জিসান), বিপুল শেখ, ইছাদ হোসেন, এমবি বিভাগের বেলাল হোসেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান রহমান রাব্বি, পিইএসএস বিভাগের আশিকুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, নৃপেন্দ্র নাথ রায়, ফার্মেসী বিভাগের জিএম রাইসুল হক রানা, পিইএসএস বিভাগের মুশফিকুর রহমান ও
ফাহিম ফয়সাল লাবীব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,অফিস আদেশের ভিত্তিতে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে সকল বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। যার অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিন, রেজিস্ট্রার, সকল চেয়ারম্যান/দপ্তর প্রধান/পরিচালক, সকল প্রভোস্ট ও ভাইস-চ্যান্সেলরের একান্ত সচিবের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
বিশ্বদ্যিালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সোহেল রানার নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করে। তাদের বেপরোয়া আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ অনেকেই অসহায় হয়ে পড়ে। চক্রটি চাকরিপ্রার্থীদের অপহরণ ও আবাসিক হলের (ছাত্রাবাস) এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় বেশ আলোচিত হন। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় এ ঘটনায় জড়িত ৯ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এই ৯ জনের পাশাপাশি বর্তমানে ছাত্রত্ব না থাকা আরও ৪ জনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০২২ সালের ৩১ জুলাই সোহেল রানাকে সভাপতি ও তানভীর ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই ১১ জনের মধ্যে ৭ জনেরই বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। সভাপতি সোহেল রানা শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতক ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে ছাত্রত্ব না থাকলেও তারা দাপটের সঙ্গে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। কমিটির সহসভাপতি আফিকুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ পারভেজ লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া আরেক সহসভাপতি মেহেদী হাসানের অনার্স শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। বর্তমানে তার ছাত্রত্ব নেই। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম একরামুল কবির ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নিয়মানুসারে তাঁরও ছাত্রত্ব নেই। ছাত্রলীগের নামে তারা ক্যাম্পাসে যা ইচ্ছা তাই করতেন। তারা নানা অপরাধের মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে উল্লিখিত বহিস্কৃত ১৩ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।