নিউজ ডেস্ক : ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজের ম্যাজিক ফিগার অতিক্রম করেছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবারের নির্বাচনে জিতে তিনি হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর বয়স এখন ৭৮ বছর। এর আগে জো বাইডেন ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
শুধু তাই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ৬০ বছর বয়সী কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি আরেক নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। কমলার সঙ্গে ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলে নজর ছিল সবার। তবে নির্বাচনের ফলাফলে অবশ্য তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
সর্বশেষ দোদুল্যমান উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। উইসকনসিনে ১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এ জয়ের ফলে ট্রাম্প জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে গেছেন। ট্রাম্পের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত ২৭৫টি ইলেকটোরাল ভোট জমা পড়েছে। কমলার ঝুলিতে জমেছে ২২২টি ইলেকটোরাল ভোট।
ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান করার সুযোগ দেবে।’
এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ সময় মঞ্চে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তাঁর রানিং মেট জে ডি ভান্স।
১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিল ক্লিনটনের প্রচার কৌশলবিদ জেমস কারভিলের একটি উক্তি বিখ্যাত হয়ে আছে। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে মূলত প্রাধান্য পায় ‘অর্থনীতি আর বোকারা!’
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররাও অন্য কোনো বিষয়ের চেয়ে অর্থনীতিকেই বেশি আমলে নেয়। এবারের নির্বাচনি প্রচারের সময় বিভিন্ন জনমত জরিপে আমেরিকানদের প্রায় অর্ধেকই বলেছিলেন, চারবছর আগের তুলনায় এখন তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন।
সুতরাং দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাদের কাকে পছন্দ তা খুব স্পষ্টই ছিল। তিনি হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার ভোটের পর ফক্স নিউজ দোদুল্যমান তিন রাজ্য পেনসিলভেইনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং জর্জিয়ায় ট্রাম্পের জয়ের পূর্বাভাস দেওয়ার পর তিনি জয় ঘোষণা করেন। বাকি আরও ৪ টি দোদুল্যমান রাজ্যে তিনি এগিয়ে ছিলেন। এরপর উইসকনসিনে জয়ের মধ্য দিয়ে ২৭০ ইলোকটোরাল ভোটের ম্যাজিক নম্বর ছাড়িয়ে গেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প।
এডিসন রিসার্চ এর জাতীয় বুথফেরত জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, অর্থনীতি ইস্যুটিকে শীর্ষে রেখেছে ৩১ শতাংশ ভোটার। আর ৩৫ শতাংশ ভোটার দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ, অর্থনীতি আছে দ্বিতীয় স্থানে। আর যেসব ভোটারের কাছে অর্থনীতিই প্রধান উদ্বেগের বিষয় তারা ব্যাপকভাবে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে। এ সংখ্যা ট্রাম্পের পক্ষে ৭৯ শতাংশ এবং হ্যারিসের পক্ষে ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে, গত কয়েকবছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভোটারদের স্পষ্ট উদ্বেগ তাদেরকে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার দিকে চালিত করেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে কেবল অর্থনীতি নয়, মূল্যস্ফীতির বিষয়টি ট্রাম্পকে জেতাতে চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করেছে।
ভোটারদের অর্ধেকেরও বেশি বলেছেন, গতবছরে তারা মূল্যস্ফীতির কারণে দুরবস্থায় ছিলেন। আবার প্রায় চারজনে একজন আমেরিকানই বলেছেন, তারা মূল্যস্ফীতির কারণে মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গেছেন।
যে ভোটাররা বলেছেন, তাদেরকে মূল্যস্ফীতির কারণে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের অনেকেই ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন। এ সংখ্যা ৫০ শতাংশ থেকে ৪৭ শতাংশ। আর মারাত্মক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা বলা ৭৩ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন।
এডিসনের বুথ ফেরত জরিপের তথ্য বলছে, দেশজুড়ে ৪৫ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা চারবছর আগের তুলনায় এখন বেশি খারাপ গেছে। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ।
এই ভোটাররা হ্যারিসকে ভোট না দিয়ে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। ট্রাম্পের পক্ষে পড়েছে ৮০ শতাংশ ভোট। আর হ্যারিস পেয়েছেন ১৭ শতাংশ ভোট।
ট্রাম্প পাচ্ছেন বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরই মধ্যে জয় ঘোষণা করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প। যদিও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি। এমনকি প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের জাদুসংখ্যা ২৭০ এখনও ছুঁতে পারেননি ট্রাম্প। তবে তার জয় ঘোষণার পরই বিশ্বনেতারা একের পর এক অভিনন্দন জানাচ্ছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।
ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানানো বিশ্বনেতাদের মধ্যে আছেন, যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো, ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ আরও অনেকে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক্সে লেখেন, “নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন। সামনে আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স বার্তায় ট্রাম্পকে বন্ধু সম্বোধন করে লিখেছেন, “আন্তরিক অভিনন্দন বন্ধু, আসুন এবার আমরা একসঙ্গে আমাদের জনগণের উন্নতির জন্য এবং বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক্স-এ লিখেন, “ইতিহাসের সেরা প্রত্যাবর্তনের জন্য অভিনন্দন! হোয়াইট হাউজে আপনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য এক নতুন সূচনা।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো শুভেচ্ছা বার্তায় লিখেছেন, “অভিনন্দন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বে আরও শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানো অন্যান্য নেতাদের মধ্যে আছেন- জোনাস গাহর স্টোয়ার, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী; উলফ ক্রিস্টারসন, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী; কার্ল নেহামার, অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর; ভিক্টর ওরবান, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী; পেত্র ফিয়ালা, চেক প্রধানমন্ত্রী।
মার্সেল সিওলাক, রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী; উলফ ক্রিস্টারসন, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী; জোনাস গাহর স্টোয়ার, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী; মেটে ফ্রেডেরিকসেন, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী; নায়িব বুকেলে, এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট। সব নেতাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।