অসীম মোদক, মহেশপুর: মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী করিঞ্চা গ্রামের উকড়ি’র বিলে শীতের শুরুতে অতিথি পাখিদের আনাডোনা শুরু হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের আশায় প্রতি বছর শীতের সময় এসব পাখিদের আগমন ঘটে। ২২৫ একর আয়তনে উকড়ি বিলে বর্তমানে পাখি রয়েছে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির।
স্থানীয়রা জানান, শামুখ ভাঙ্গা, হাসপাখি, বক, রাঙা ময়ূরী, ছোট স্বরালী, সারশ, গাঙচিল, পানকৌড়ি, বকসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার পাখি এসেছে। কখনও তারা দলবেঁধে জলকেলি খেলতে আবার কখনও মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে ব্যস্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, করিঞ্চা গ্রামের উকড়ি বিলের জলাশয় সেজেছে এক নতুন সাজে। শীতের অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে এ বিলটি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়াভিরাম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ভীড় করে দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীদের বিলের পানিতে ঘুরে ঘুরে পাখি দেখতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ইঞ্জিনচালিত নৌকার ব্যবস্থা। বিল পাহারার দায়িত্বে থাকা লোকগুলো দৃষ্টি রাখছে কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে।
পাশের গ্রাম থেকে বিলে ঘুরতে আসা সাব্বির হোসেন বলেন, উকড়ি’র বিলের চারপাশে শাপলা, আর পদ্মপাতা জন্মেছে। সেখানে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেছে পাখিরা। দিনভর বিলের বিভিন্ন প্রান্তে শামুক ও মাছ শিকার করে পাখিরা কলকাকলিতে মুখরিত করে রাখে পুরো এলাকা। পাখির কিচিরমিচির শব্দ মন কাড়ে পাখি প্রেমীদের। এই দৃশ্য দেখতে প্রায় প্রতিদিন আসি। এখানে ঘোরার জন্য রয়েছে নৌকার ব্যবস্থাও।
ভবনগর গ্রামের প্রকৃতি প্রেমী নাজমূল হোসেন জানান, এই বিলে পাখিদের ওপর কোনো অত্যাচার হয় না। যার কারণে শীত প্রধান দেশ থেকে এই মৌসুমে বেশি পাখি আসে। এই শীতে এখানে গাঙচিল, ডঙকুর, সড়াইল, কাইয়ুমসহ আরও নাম না জানা অনেক পাখি দেখা যায়।
বিলের পাহারাদাররা বলেন, বিলে যখন মাছ চাষ হত না তখন শিকারিরা পাখি শিকার করতে আসতো। কিন্তু যখন মাছ চাষের আওতায় আসে এবং কবীর হোসেন ইজারা নেয় তারপর থেকে শিকারিরা আর পাখি শিকার করতে আসে না।
উকড়ির বিলের ইজারাদার কবীর হোসেন বলেন, নিজের ভালো লাগার জায়গা থেকে পাখিদের এই নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে যখন বিদেশি পাখিগুলো আসতো, তখন অনেক পাখি-শিকারি আসতো, পাখি শিকার করতো। তখন চিন্তা করি, শিকার বন্ধ না করলে পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে না। এরপর আমি ব্যবস্থা নিয়ে শিকারিদের আসা বন্ধ করি। এখন পাখিদের কেউ একটি ঢিলও মারতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, এই বিলে ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির পাখি বসবাস করছে। শীতের এই মৌসুমে পাখিগুলো বিলে আসে। এখানে নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত খাবার থাকায় অনেক পাখি গরমকালেও এই জায়গা ছেড়ে যায় না। বিলে আশেপাশে সবুজ থাকলে তারা বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে। পাখিগুলো সন্ধ্যা হলেই পদ্মপাতার আড়ালে এবং আশেপাশের গাছে থাকে সকাল হলেই আবার বিলে চলে আসে। পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করতে পেরে সত্যিই অনেক ভালো লাগে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বিলে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হবে।