নিজস্ব প্রতিবেদক : কূপমণ্ডুকতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে যশোরে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, মনীষীদের প্রচারিত আদর্শ মেনে চলতে পারলেই সমাজে কোনো বিশৃঙ্খলা হয় না।
যশোরে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মতিথি উপলক্ষে রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশন আয়োজিত দুই দিনব্যাপী উৎসবের মঙ্গলবার সমাপনী দিনে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম আরো বলেন, কূপমণ্ডুকতা পরিহার না করতে পারলে ধর্ম এবং ধর্মের দর্শন উপলব্ধি করা যায় না। নামে ধার্মিক নয়-সার্বিক অর্থে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, স্রষ্টার পথই হল কল্যাণের পথ। কল্যাণের পথে যে থাকে তার দ্বারা অকল্যাণ হওয়া সম্ভব নয়।
এদিন ভোরে মঙ্গলারতির পর বেদমন্ত্র পাঠ ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়। এর আগে সোমবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীদের মাঝে ৬৫০ প্যাকেট ফল ও পাউরুটি বিতরণ করা হয়।
উৎসবের সমাপনী দিনে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল সকালে বিশেষ পূজা, হোম, ভজন সংগীত, ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও পুষ্পাঞ্জলি, ‘স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা, স্বামী বিবেকানন্দ ও আমেনা খাতুন বৃত্তি প্রদান, ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান এবং অন্ন প্রসাদ বিতরণ।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞানপ্রকাশানন্দ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন যশোর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস। আলোচক ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ যশোরের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার জয় প্রকাশ বসু। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ শিক্ষক তারাপদ দাস, বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক আঞ্জেলা গোমেজ, নড়াইল মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর তাপসী কাপুড়িয়া এবং স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ যশোরের সভাপতি তপন রায়। স্বাগত বক্তব্য দেন আশ্রমের সহ সম্পাদক স্বামী আত্মবিভানন্দ। সঞ্চালনা করেন দেবাশীষ রাহা।
সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ সভ্যতার ইতিহাসে অনন্যসাধারণ এই কারণে যে, এক জীবনে ধর্ম-কর্ম এবং সমাজসেবার ব্রত গ্রহণ করে কেবল স্বদেশে নয়, পুরো বিশ্বে বহুজন নায়কে পরিণত হয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ চর্চা না করে তাকে যদি কেবল একজন হিন্দু সন্ন্যাসী হিসেবে দেখা হয় তা হবে বেদনাদায়ক। ধর্ম-দর্শন-ভাষা-সাহিত্য-সমাজ সংস্কার ও মানবতার সেবা এবং বাঙালির নবজাগরণে স্বামী বিবেকানন্দের যে অবদান, তা যদি বাঙালি জাতি ভুলে যায়- তা হলে তা হবে আগামী দিনের সভ্যতার পথ রুদ্ধ করার শামিল। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় স্বামী বিবেকানন্দের কর্ম ও দর্শন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় এই কারণে যে, স্বামী বিবেকানন্দের মতো একজন মহান কর্মবীরের ত্যাগ, দেশপ্রেম, সর্বজনীন ভালোবাসা এবং জীবনাদর্শ একটি সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনামুক্ত ন্যায় এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আমাদের উৎসাহিত করতে পারে।’
আলোচনার পর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশন যশোরের উদ্যোগে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের মেধাবী ৫০ শিক্ষার্থীর মাঝে স্বামী বিবেকানন্দ ও আমেনা খাতুন শিক্ষাবৃত্তি ও শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে ফল প্রদান করা হয়। শেষে অন্ন প্রসাদ বিতরণ করা হয়।