Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

নতুন পথ রচনাই আমাদের প্রতিশ্রুতি : প্রধান উপদেষ্টা

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই , ২০২৫, ০৩:০২:১৭ পিএম

 

 স্পন্দন ডেস্ক: শুধু কাগুজে সংস্কার নয়, গভীরতম সংস্কারের মাধ্যমে ‘নতুন পথ রচনায়’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

একই সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করে অন্তর্ভূক্তি ও অংশগ্রহণমূলক বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

মঙ্গলবার ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ের আয়োজনে জুলাই স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

রাজধানী ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ অনুষ্ঠানে জুলাইকে বাংলাদেশের ‘পুনর্জন্মের’ মাস হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “এটা শুধু স্বৈরাচার মুক্তির মাস নয়। কতগুলো প্রলেপ দিয়ে, সেখান থেকে বিদায় করে দিই, যদি মনে করি যে কাজ বেড়ে যাচ্ছে- তাহলে আমরা বড় ভুল কাজ করব।

“এখনও সময় আছে। জুলাইয়ের শিক্ষাগুলো আমাদের কাছে তাজা আছে। মাঝে মাঝে ভয় হয়, এই শিক্ষা ক্ষয়ে যাবে, ভুলে যাবে সবাই। আবার অতীতের মত ভাষা রপ্ত হয়ে যাবে, আবার সেই ভাষা ব্যবহার করব, আবার সেই ব্যাখ্যা ব্যবহার করব।”

তিনি বলেন, “সে দিকে যাতে আমাদের যেতে না হয় আর কোনদিন, এই পথ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া; এই পথের কোনো ঠিকানায় আর যাব না, আমাদের নতুন পথ রচনা হবে। সেই নতুন পথ রচনাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।”

আওয়ামী লীগ আমলে ’গুম’ ঘরে নির্বিচারে আটক রাখার কথা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “যে মহাতাণ্ডব, এই তাণ্ডবের প্রতিক্রিয়া কত গভীরভাবে আমাদের মধ্যে প্রথিত আছে, সেটা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।”

তিনি বলেন, বহুল আলোচিত আয়নঘরের আদলে ‘হাউজ অব হরর’ বানানোর প্রস্তাব তিনি তার সহকার্মীদের দিয়েছিলেন। উত্তরে তারা বলেছে, ‘এটাতো সারাদেশে করতে হবে। দেশজুড়ে হরর সৃষ্টি করা হয়েছিল‘।

“যদি আয়নাঘরের প্রতিটি ঘর আমরা দেখাতে পারতাম, তাহলে জাতি বুঝতে পারত, ১৬ বছরে কী কাণ্ডটা হয়েছে। এবং কেউ এমন নাই যে, তার কোনো পরিচিত এই হররের শিকার হয়নি। ছোট ছোট ঘরে সারাদেশে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সেই কাহিনীগুলো নিয়েই আমাদের আজকের বাংলাদেশ।”

সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ গড়তে চাওয়ার কথা তুলে ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের তরুণরা দেখিয়েছে এই দেশ একেবারে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে।

“উপরে প্রলেপ দেওয়া পরিবর্তন নয়, গভীরতম পরিবর্তন। সেই গভীরতম পরিবর্তন যদি না করি, আবার চলে আসবে সেটা। যে সংস্কার আমাদের দরকার তা হল আরও গভীরের সংস্কার।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমার আবেদন হচ্ছে, আমাদের জাতির মাঝে এমন কিছু রয়ে গেছে, সেটার যত শাস্তি দিই, যত কিছু দিই, ওটার বীজগুলো আমাদের মধ্যে থেকে যাবে। এই বীজ থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পাই, এটাই আজকের জানার বিষয়, আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়।

“এটা কয়েকটা কাগজের সংস্কার না, এটা মনের গভীরতর জায়গার সংস্কার। মানুষ হিসেবে আমাদেরকে নিজেদের কাছে পরিচিত করা দরকার। মানুষ হিসেবে আমরা কী কী চাই, তা করা দরকার।”

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা বিশ্বের একটি নৈতিক দিকনির্দেশক এবং তার মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও সুপ্রতিষ্ঠিত।

“তবুও গত ১৬ বছরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের এই অধিকার বারবার খর্ব করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে, স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছিল শাসনের মূল হাতিয়ার।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে জুলাই অভ্যুত্থানের বলপ্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের সুপারিশগুলোকে আমাদের হৃদয়ের গভীরে গ্রহণ করেছি। এটা কেবল অন্যদের প্রতি বাধ্যবাধকতার জন্য নয়, বরং আমাদের নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে।

সরকারের নেওয়া কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ফৌজদারি কার্যবিধি পরিবর্তন, গুম বিষয়ক কমিশনে স্বাক্ষর এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশন খোলার সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা তুলে ধরেন তিনি।

ইউনূস বলেন, ”আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়নি। সংস্কারের পাশাপাশি গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িততভাবে বিচারিক জবাবদিহিতায় আনার কাজ করছি আমরা।

“তবে বিচার মানে শুধু শাস্তি দেওয়া নয়। বিচার মানে এটা নিশ্চিত করা যে, নিজের নাগরিকের নিবর্তন, স্তব্ধ করা এবং ধ্বংস করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়েছে।”

তিনি বলেন, ”আমরা নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরিতে জাতীয় ঐকমত্যের জন্য কাজ করছি। যাতে সেটা একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে।

“লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট: এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গৌরবের সঙ্গে, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”

ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জুলাই আন্দোলনে নিহত গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান লিটন এবং নিহত মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী বক্তব্য দেন।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)