মিরাজুল কবীর টিটো: যশোরে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে পেট্রোল না দেয়ার নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি শহরের যানজট নিরসনে প্লান করে পদক্ষেপ নিতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে ও চৌগাছার বলুহ মেলার অশ্লীলতা বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালেক্টরেট সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে রোববার সকালে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানার উপস্থাপনকৃত তথ্যে দেখানো হয়- খুলনা বিভাগের মধে যশোর জেলায় আগস্ট মাসে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ জেলা ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন আহত ও ৬ জন নিহত হয়েছে। বেশি দুর্ঘটনার হার মোটরসাইকেলে ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এ তথ্যের প্রেক্ষিতে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে পেট্রোল না দেয়ার নিয়ম চালু করলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে না। কারন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স হয় না। কিশোররা মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না। হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালানোর কারনে দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি আরো বলেন ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে আসা চালকদের লিখিত পরীক্ষার পর ট্রাফিক নিয়মের উপর ক্লাস নিতে হবে। সরকারি দপ্তরে নিয়োগের সময় ডোপ টেস্ট করে নিয়োগ দিতে হবে। আর যারা অতিরিক্ত আয়ের জন্য ইজিবাইকের লাইসেন্স ভাড়া দেয় এটা শতভাগ নির্মূল করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, কোনো নোটিশ ছাড়া শহরে ৮০ থেকে ১০০টি অবৈধ যানবাহন আটক করা হয়েছে। আগামী একমাস কেউ ফোন দেবেন না, তাহলে শহর যানজট মুক্ত করা হবে। পৌরসভার দেয়া লাইসেন্স বাদে ইজিবাইক শহরে চলাচল করতে পারবে না। যারা একাধিক লাইসেন্স ভাড়া দিয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। যানজট নিরসনে ১০ দিন শহরে মাইকিং করা হবে। এগারদিনের মাথায় অবৈধ ইজিবাইক,অটোরিক্সা আটক করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন-একটি মাসে একটি সমস্যা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে ফোকাস করা দরকার। প্রত্যেক মাসে একাধিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় বলে সমাধান হয় না। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ডিএনএ টেস্টের কারণে রিপোর্ট দিতে দেরি হচ্ছে। পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় মাদকের গডফাডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন- একবছর আগে চেয়ে বর্তমানে যশোরের চিত্র ভিন্ন। ঢাকার চেয়ে বর্তমানে যশোরে বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোন নিয়ম ছাড়া যে কেউ ইজিবাইক, অটোরিক্সা রাস্তায় নামাচ্ছে। এটা রোধ করার প্রক্রিয়া গ্রহন করা উচিৎ। কিশোররা মাদক সেবন করে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন চায়ের দোকানে কেরাম বোর্ড খেলার পাশাপাশি মাদক সেবন করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা বলেন- ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ায় ঔষুধ সংকট হচ্ছে। জনবল কম থাকায় অনেক সময় বিভিন্ন পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। যশোরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও হাসপাতালর সার্ভিস দেয়া যাচ্ছে না। এজণ্য ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রাখায় ও হাসপাতালে সামনে অবৈধ দোকান করাই যানজট হচ্ছে। রোগীরা হাসপাতালে প্রবেশের ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন- প্রতি মাসের আইনশৃঙ্খলা সভায় রাস্তার উপর বাস থামিয়ে রাখা বন্ধের বিষয় আলোচনা হলেও বন্ধ হচ্ছে না। বিশেষ করে শিক্ষা বোর্ডের সামনে থেকে ঢাকার রোড ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার অধেক দখল করে বাস থামিয়ে রাখা হয়। এতে করে বড় সমস্যা হচ্ছে।
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন- শহরে যানজট প্রকট আকার ধারন করেছে। সিভিল কোর্ট মোড়, দড়াটানা, চৌরাস্তা ও কুইন্স হাসপাতালের সামনে বেশি যানজট হচ্ছে। ইজিবাইক অটোরিক্সা কমালে যানজট কমবে।
জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম রসুল বলেন- গ্রামগঞ্জে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে জামায়াত ইসলামী সহযোগিতা করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আতঙ্ক মুক্ত করতে সন্ত্রাসী আটকসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সহসভাপতি নূর ইসলাম বলেন-পুলিশ প্লাজা নামক একটি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর মেলার নামে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান টাক্স দেয় না, এমনকি ট্রেড লাইসেন্স নেই। এ কারণে গাড়িখানা রোডে যানজট হচ্ছে।