স্পন্দন ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানি করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। তার আশা এর মাধ্যমে মার্কিন শুল্ক আরও কমবে, যা দুই দেশের স্থায়ী ও পারস্পরিক সুবিধাজনক বাণিজ্য অংশীদারত্বে সহায়ক হবে।
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি (এইউএসটিআর) ব্রেন্ডান লিঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের বিষয়ে জানানো হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও উন্নয়ন সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্ক হার কমানোর কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র্রকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যে অগ্রগতি দেখেছি, তার জন্য ধন্যবাদ। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বিভিন্ন দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সময় বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। পরে জুলাইতে দীর্ঘ আলোচনার পর তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে তুলে ধরেন।
রোববার সফরকারী মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে উভয় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি তুলা ও সয়াবিনসহ মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানির পরিকল্পনা নিয়েও মতবিনিময় হয়।
বৈঠকে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি আমদানি, বেসামরিক উড়োজাহাজ কেনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়েও আলোচনা হয়।
দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বর্তমানে আলোচনাধীন বাণিজ্য চুক্তির খসড়া দ্রুত সই করার আশাও প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের স্বার্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কাছাকাছি। এটি এই প্রক্রিয়াকে সহজ এবং আরও সম্ভাবনাময় করে তুলবে।”
এসময় প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ১১ দফা শ্রম কর্মসূচি (লেবার অ্যাকশন প্ল্যান) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পদক্ষেপ তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক শ্রমমান ও ন্যায্য চর্চা বজায় রাখতে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা বলেন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ এবং স্বল্প সুদের ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে।
তিনি বলেন, “মার্কিন বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের দরজা আরও উন্মুক্ত থাকবে।”
তার সরকার দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার বিষয়ে কাজ করছে বলে প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্থ করেন।
ইউএসটিআর এর সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ শুল্ক নিয়ে আলোচনার সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের গঠনমূলক মনোভাবের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অংশীদারত্ব বাড়ানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারি থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করে যখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি একপাক্ষিকভাবে কমানোর প্রস্তাব দেন। এই প্রাথমিক উদ্যোগ আলোচনাকে সহজ করেছে এবং ফলাফলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি শুল্ক চুক্তি এবং বিভিন্ন ‘ক্রয়’ প্রতিশ্রুতি সময়মত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীর উদ্দিন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, ইউএসটিআর এর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক এমিলি অ্যাশবি, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।