আবদুল কাদের: যশোরে কর কমিশনারের কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট শহরের টিবি ক্লিনিক মোড়ে অস্থায়ী কার্যালয়ে ৪ জেলা নিয়ে এই অফিসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে অফিসটিতে একজন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর আগে কর কমিশনারের কার্যালয়টি ছিল খুলনাতে। সেখানে গিয়ে যশোরাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম সম্পাদন করা লাগত। কার্যালয়টি যশোরে চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের আর খুলনাতে যেতে হবেনা। যশোর থেকে তারা কমিশনারেট কার্যালয়ের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এতে করে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বাড়বে, তেমনি ব্যবসায়ীদেরও হয়রানি কমবে।
যশোর কর কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর খুলনা বিভাগের ১০ জেলার কার্যক্রম চলত খুলনা কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে। অফিসটির অধীনে ২২টি সার্কেল অফিস ছিল। গত ২৬ আগষ্ট ৪ জেলা নিয়ে যশোর কর কমিশনার অফিসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করা হয়। বাকি তিনটি জেলা হলো নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ। এসব জেলাগুলোতে ৬৬টি সার্কেল অফিস থাকবে। যার মাধ্যমে নতুন করদাতা শনাক্ত ও যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে তাদেরকে শনাক্ত করতে সহজ হবে।
বর্তমানে যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলায় টিআইএনধারীদের (করদাতা) হার ৪ লাখ ৫ হাজার ৭০৯ জন্য। রিটার্ণ দাখিল করে এখ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৩ জন। এরমধ্যে যশোর জেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৫ কোটি টাকা। সেখানে আদায় করা হয় ২৪০ কোটি টাকা।
এব্যাপারে যশোরের কর কমিশনার মাসুদ রানা জানান, যশোরে ৪টি জেলা নিয়ে নতুন কর কমিশনারের কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে শহরের টিবি ক্লিনিক মোড়ে উপ-কর কমিশনারের ভবনে অস্থায়ীভাবে অফিসের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শিগগিরই আমরা নতুন অফিসে উঠব। সেখানে পূর্ণাঙ্গভাবে চারটি জেলার কর আদায়ের কাজ শুরু হবে। ৪টি জেলার অধীনে ২২টি সার্কেল অফিস করা হবে। যশোর সদরে আগে ছিল একটি সার্কেল অফিস। সেখানে এখন করা হবে ৬টি সার্কেল অফিস। এতে করে নতুন করদাতা শনাক্ত এবং যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেনা, তাদেরকে শনাক্ত করতে সহজ হবে। কেননা আগে লোকবলের অভাবে নতুন করদাতা সনাক্ত ও রাজস্ব আদায় বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে। এখন থেকে আশা করছি সরকারের রাজস্ব আদায় অনেক বেড়ে যাবে। আমি আশা করছি বছরে এই চারটি জেলা থেকে সরকার দেড় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
তিনি জানান, যশোরাঞ্চলের করদাতাদের আগে খুলনা থেকে কার্যক্রম সমপন্ন করতে হতো। এখন যশোর থেকেই সেই সেবা তারা পাবে। এতে করে ফাইলের জট কমবে, আবার আমাদের রাজস্ব আদায়ও বেড়ে যাবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু জানান, কর কমিশনারের কার্যালয় যশোরে শুরু হওয়ায় এই অঞ্চলের ব্যবসাযী তথা করদাতাদের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে। কেননা আগে অনেক ফাইল খুলনায় গিয়ে করে আসতে হতো। এতে করে আমাদের সময় ও টাকা খরচ হতো। সেটা এখন থেকে লাগবেনা। তবে কর কর্মকর্তাদের করদাতাদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বাজায় রেখে কর আদায় করতে হবে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে কর আদায় করলে যশোরের ব্যবসায়ী সমাজ সেটি মেনে নেবেনা।
ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন যশোরের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেদ হোসেন জানান, যশোরে চারটি জেলা নিয়ে কর কমিশনারের কার্যালয় খোলা হয়েছে। এতে করে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কেননা আগে লোকবলের অভাবে নতুন করদাতা সনাক্ত করা যেতনা। এখন নতন করদাতা বাড়বে। একই সাথে করদাতাদের আপিলের জন্য খুলনায় যেতে হবেনা। যশোর থেকে সমাধান করতে পারবেন তারা।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, যশোরে কর কমিশনারের কার্যালয় চালু হওয়ায় আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। আগে কর নিয়ে আপিল করতে খুলনায় যেতে হতো। এখন থেকে সেই ঝামেলা পোহাতে হবেনা। যশোর কমিশনারেট সব আপিল নিস্পত্তি করবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। তবে আমরা আহবান জানাবো কর কর্মকর্তাদের করদাতাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে কর আদায় করবে। যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয়।