স্পন্দন ডেস্ক: তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চলাকালে ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
রোববার থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার বিকালে মিছিলে পুলিশের বাধার কারণে শিক্ষকরা শাহবাগে তাদের পূর্বনির্ধারিত ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠি চার্জ, কাঁদুনে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের।
পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে কর্মবিরতি পালনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’ এর সভাপতি মো. আবুল কাশেম।
একই সঙ্গে তিন দাবিতে রাজধানী ঢাকায় তাদের আগের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও চলতে থাকবে।
ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, “দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার থেকে শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।”
শহীদ মিনারে কর্মবিরতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাশেম-শাহিন) সভাপতি আবুল কাশেম দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষকদের ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে আসার আহ্বান জানিয়ে নেতা বলেন, “আমাদের দাবি আদায় ও যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আগামীকাল (রোববার) থেকে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।
“সারাদেশের শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক-সহকারী শিক্ষক সবাই শিক্ষকের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে কর্মবিরতি পালন করবেন।”
এর আগে শনিবার বিকালে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপে করে পুলিশ। কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ বাধার কারণে তারা শাহবাগে পূর্বঘোষিত ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালন করতে পারেননি।
শিক্ষক নেতা শামছুদ্দীন মাছুদের দাবি, পুলিশের হামলায় শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ছাড়াতে এনসিপির নেতারা শাহবাগ থানায় যাচ্ছেন।
দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও প্রাথমিকের শিক্ষকদের বাকি দুই দাবি হল- চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতার নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে এ তিন দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে শাহাবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।
পরে পুলিশের বাধার মুখে কর্মসূচি পণ্ড হলে শিক্ষকরা ফের শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে ফিরে গিয়ে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে আটক করা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।
ডিএমপির উপ কমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিকাল ৫টায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “কিছু আন্দোলনকারী ‘কলম সমর্পণের’ নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়। আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
“এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন।
“পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”
জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যেসব এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা মেনে চলার জন্য সবাইকে আবার অনুরোধ করা হয়েছে ডিএমপি ডিসির বিবৃতিতে।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে শিক্ষকরা কর্মসূচি পালন করছেন।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’ ছাড়াও এ মোর্চায় আছে, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’।
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।
গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নিত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।
পরে শনিবার থেকে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।
এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন?
এসব দাবি মানা না হলে তারা ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না এলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।