ম.ম.রবি ডাকুয়া মোংলা : হাইকোর্ট বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল রেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি শশাঙ্গ শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৬১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে বাগেরহাটের চারটি আসন কমিয়ে তিনটি করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জারি করা গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।
রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন হাইকোর্টের এই নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল রাখার নির্দেশও দেন আদালত।
বিচারপতি শশাঙ্গ শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এই রায় ঘোষণা করেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর আদালত বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে বাগেরহাটের চারটি আসন কমিয়ে তিনটি করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে কারণও জানতে চান আদালত। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ১০ দিনের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
সেদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট বিপ্লব কুমার পোদ্দার, অ্যাডভোকেট ফয়সাল মোস্তফা, অ্যাডভোকেট রাজিয়া সুলতানা, ব্যারিস্টার কাজী সামান্তা এনাম, আডভোকেট আমিনুজ্জামান সোহাগ, অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইকরামুল কবির।
এর আগে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে হাইকোর্টে দুটি রিট দায়ের করা হয়েছে।
বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা ট্রাক মালিক সমিতি এ রিট দু’টি দায়ের করেন।
রিটে বাংলাদেশ সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিবাদী করা হয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা গড়ে তোলে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি এবং হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে কমিশনের শুনানিতেও অংশ নেন।
কিন্তু নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। আগের প্রস্তাবের তুলনায় শুধু সীমানা পরিবর্তন করা হয়। এর পর থেকেই সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি আসন কমানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ইসির আসন পুনর্বিন্যাস গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট সদর, চিতলমারী ও মোল্লাহাট নিয়ে বাগেরহাট-১; ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা নিয়ে বাগেরহাট-২ এবং কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ গঠিত হয়েছে।
১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট; বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর-কচুয়া; বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা এবং বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা।